পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মেয়রের আন্তরিক প্রচেষ্টা : উন্নত শহরের রূপ পেতে যাচ্ছে সিলেট আগামী বছরের শুরুতেই
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ আগস্ট ২০২১, ২:১৪:১৬ অপরাহ্ন
শাহজালালের রহ: মাজারের প্রধান ফটকের সামনের সড়ক রাস্তার উপরের বিদ্যুতের তারের জঞ্জালমুক্ত হয় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে।
সিলেট অফিস : আগামী বছরের জানুয়ারী আসার আগেই মাটির নিচ দিয়ে টানা হবে পুরো সিলেট নগরীর বিদ্যুৎ লাইন। আগামী বছরের শুরুতে অনেকটাই উন্নত দেশের পরিচ্ছন্ন শহরের রূপে দেখা যাবে সিলেট মহানগর। বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প (বিউবো) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বড় মাপের এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে পুরো শহরের বৈদ্যুতিক লাইন পাতালে চলে যাবে এবং সত্যিকার অর্থেই একটি স্মার্ট নগরীতে রূপান্তরিত হবে সিলেট। আর গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্প দ্রুত সম্পন্ন করতে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সিলেট-১ আসনের এমপি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ও সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
দেশে প্রথম মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যক্রম চালু হয় সিলেট নগরীতে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় এ কার্যক্রম। ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারী থেকে শাহজালাল মাজারের প্রধান সড়ক থেকে মাজারের প্রধান ফটক পর্যন্ত সড়কের ভূগর্ভস্থ লাইনে পূর্ণ সরবরাহ চালু করা হয়। বৈদ্যুতিক তারসহ সেবামূলক অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তারের জঞ্জাল কমাতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে এবং সিসিকের নির্দেশনায় এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শাহজালালের মাজারের ফটক পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছিলেন, ‘উন্নত দেশের মতো এই প্রথম সিলেটে মাটির নিচ দিয়ে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুতায়ন প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এখন রাস্তার ওপর কোনও খুঁটি নেই। এ কারণে বেড়েছে এই এলাকার সৌন্দর্য। সিসিকের ১নং ওয়ার্ডের আওতাধীন হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজারকে কেন্দ্র করে এই কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সিলেটকে বাংলাদেশের মধ্যে একটি অত্যাধুনিক ও সুন্দর নগর হিসেবে গড়তে যা করার প্রয়োজন তাই করা হবে।’ ২০২০ সালের জানুয়ারিতে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার এলাকার সড়কের ওপরে থাকা বিদ্যুতের খুঁটি সরিয়ে মাটির নিচ দিয়ে সংযোগ চালু করা হয় বিদ্যুতের। পরে জঞ্জালবিহীন হয় নগরীর আম্বরখানা থেকে বন্দরবাজার এবং পুর্বপশ্চিম জিন্দাবাজার এলাকার রাস্তা।
ধাপে ধাপে পুরো সিলেট নগরীর বিদ্যুৎ লাইন মাটির নিচ দিয়ে টানতে এবং সে কাজ দ্রুত শেষ করতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জনাব নসরুল হামিদ এবং সচিব মো. হাবিবুর রহমান বরাবরে দুটি সরকারি চাহিদাপত্র (ডি.ও লেটার) প্রেরণ করেন সিলেট-১ আসনের এমপি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সোমবার (১৬ আগস্ট) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে প্রেরিত চিঠি সূত্রে জানা গেছে, পিডিবির অধীনে সিলেট মহানগরীতে চলমান আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুৎ কেবল স্থাপন প্রকল্পের রিভাইসড ডিপিপির আওতায় মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ১১টি সড়ক (দৈর্ঘ্য ১৪.৬৬ কিলোমিটার) অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রস্তাব প্রেরণ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ জুলাই পুরাে সিলেট মহানগরের বিদ্যুৎ লাইন মাটির নিচ দিয়ে স্থাপন করার জন্য প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বরাবরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথম ডি.ও লেটার প্রেরণ করেন। পরে সোমবার আরেকটি লেটার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে প্রেরণ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
দ্বিতীয় চিঠিতে তিনি বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকা সিলেট মহানগরীর সংযুক্ত তালিকায় উল্লিখিত এলাকাসমূহে মাটির নিচ দিয়ে বৈদ্যুতিক তার সংযােগ স্থাপন এবং পরবর্তীতে পুরাে সিলেট মহানগর এলাকার বিদ্যুৎ লাইন মাটির নিচে আনার জন্য আপনাকে বিশেষভাবে অনুরােধ করছি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠি পাওয়ার পরপরই সচিব মো. হাবিবুর রহমানের নির্দেশে মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প (বিউবো) এক জরুরি বৈঠক ডাকে। এ বৈঠকে সিলেট মহানগর এলাকার বিদ্যুৎ লাইন মাটির নিচ দিয়ে টানার বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়।
এ বিষয়ে বিউবো’র প্রকল্প পরিচালক (অ. প্র. প্র.) পল্লবী জামান মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে সোমবার একটি ডি. লেটার প্রেরণ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সচিব স্যারের নির্দেশে আজ (মঙ্গলবার) আমরা এ বিষয়ে জরুরি বৈঠক করি এবং বৈঠকের ফলাফল ফলপ্রসু হয়। আমরা আশা করছি সপ্তাহখানেকের মধ্যে এর অনুমোদন আসবে এবং চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই সিলেট মহানগর এলাকার বিদ্যুৎ লাইন মাটির নিচ দিয়ে টানার কাজ সম্পন্ন হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের জুলাইয়ে ‘সিলেট বিভাগে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন’ শীর্ষক ২ হাজার ৫৩ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এ প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর কিছু এলাকার বিদ্যুৎ লাইন ভূগর্ভে স্থানান্তরের কাজ শুরু হয়।
বিউবির অর্থায়নে ও সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পরীক্ষামূলক (পাইলট) প্রকল্পের আওতায় নগরীর ইলেকট্রিক সাপ্লাই এলাকার বিদ্যুৎ সাবস্টেশন কেন্দ্র থেকে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইন আম্বরখানা, চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার ও কোর্ট পয়েন্টে হয়ে সিলেট সার্কিট হাউস পর্যন্ত স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ইতোমধ্যে পূর্ব এবং পশ্চিম জিন্দাবাজারের বিদ্যুৎ লাইনও নেয়া হয়েছে মাটির নিচ দিয়ে।