বিশ বছর আগে তালেবানরা পালিয়েছিল, এখন কী হবে আফগানিস্তানে?
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ আগস্ট ২০২১, ১০:০০:২৮ অপরাহ্ন
কাবুলে আমেরিকার দূতাবাসের ঘরগুলো
রাশিয়ার দূতাবাস পালায় নি। তাদের কর্মকর্তারা বহাল আছেন। এর মানে কি? নিশ্চয়ই অর্থবহ। আবার হিসাব এতো সোজাও না। ট্রাম্পের আমল থেকেই তালেবানদের সুযোগ দেয়া হচ্ছিল, তারা যাতে দেশটির বিভিন্ন দিকে শক্ত অবস্থানে আসতে পারে।
সারওয়ার চৌধুরী : আফগানিস্তান তালেবানের নিয়ন্ত্রণে। অনেকটা তাইমুর লঙের সৈন্যরা যেভাবে রাজ্য জয় করেছিল ৫ শ বছর আগে, সেরকমভাবে কাবুল ঢুকে পড়ল তারা। আবার বলা যায় রূপকথার মতো, যাদুবাস্তবতার মতো দখলে নিল কাবুল।
প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি পালাবেন, সেটা দুদিন আগেই মনে হয়েছিল। আমেরিকার কোলে বসে দেশ চালাচ্ছিলেন। তার পালানোর সাথে আমেরিকার ডিপ্লোমেটিক মিশনও পালালো, আমেরিকা পালালো।
রাশিয়ার দূতাবাস পালায় নি। তাদের কর্মকর্তারা বহাল আছেন। এর মানে কি? নিশ্চয়ই অর্থবহ। আবার হিসাব এতো সোজাও না। ট্রাম্পের আমল থেকেই তালেবানদের সুযোগ দেয়া হচ্ছিল, তারা যাতে দেশটির বিভিন্ন দিকে শক্ত অবস্থানে আসতে পারে। কাতারে আছে আমেরিকার ঘাঁটি। যে-ঘাঁটি মধ্যপ্রাচ্য আমেরিকা কর্তৃক নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। কাতারেই বসে তালেবান যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণ করছিলেন নেতারা। কাতারেই আমেরিকাসহ মিত্র দেশগুলোর প্রতিনিধির সাথে দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছিল আফগান পরিস্থিতি নিয়ে। আশরাফ গনির প্রতিনিধিও সেখানে। এরিমধ্যে আমেরিকা যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ এক মাস তিন মাসের হিসাব দুনিয়াকে দেখাচ্ছিল যে তালেবান কবে দখল করবে। তারা দুদিনেই কাবুলের প্রেসিডেন্সিয়েল প্যালেসের নিয়ন্ত্রণ নিল।
বিশ বছর আগে ২০০১ সালে তালেবানরা পালিয়েছিল আমেরিকার ভয়ে। তার আগে আমেরিকার সহায়তা নিয়ে তালেবান ও অন্যান্য গোষ্ঠী রাশিয়াকে আফগানিস্তান থেকে তাড়িয়েছিল।
২০ বছর আমেরিকার উপস্থিতিতে আফগানিস্তানে কী হলো?
১. আফগানিস্তানে আমেরিকান সার্ভিস সদস্য হত্যা করা হয়েছে ২৪৪৮ জন।
২. মার্কিন ৩৮৪৬ ঠিকাদারের প্রাণ গেল।
৩. আফগান জাতীয় সামরিক ও পুলিশ মারা হলো ৬৬,০০০ জন।
ন্যাটো সদস্য দেশগুলোসহ অন্যান্য সহযোগী পরিষেবা সদস্য মারা হলো ১১৪৪ জন।
৪.আফগান নাগরিক মারা হলো ৪৭,২৪৫ জন।
৫. তালেবান ও অন্যান্য বিরোধী যোদ্ধা মারা হলো ৫১,১৯১ জন।
৬. সাহায্য কর্মী মারা হলো ৪৪৪ জন
৭. যুদ্ধ কভার করতে এসে ৭২ সাংবাদিক প্রাণ দিলেন।
২০০৬ সালে কাবুলে সিনিয়র বুশের স্ত্রী লরা বুশের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন আফগান মেয়েরা।
এখন কী হবে আফগানিস্তানে? যা হবে তার জন্যে অপেক্ষা করতে হবে। তালেবান অধিকাংশ পশতুন ভাষা সংস্কৃতির। পাকিস্তানের পাঠানরা তাদেরকে ভালবাসে। পাঠানরাও পশতু ভাষার। তবে আফগান ডায়ালেক্ট আর পাকিস্তানের সুবে সরহাতের পাঠানদের ডায়ালেক্টে পার্থক্য আছে। আবুধাবিতে পাঠানদেরকে খুব কাছে থেকে দেখেছি ২৩ বছর। ওরা ইসলামি কালচারের উপরে স্থান দেয় তাদের ‘পাঠানি দস্তুর’কে। যেমন: বউয়ের সাথে খেতে বসবে না। তাতে নাকি মর্দের ইজ্জতহানি হবে। বিয়ে করে বউ আনতে বর যাবে না কনের বাড়ি। বরের মা বোনেরা গিয়ে আনবে। পশতুন ভাষা সংস্কৃতির মানুষদের মাঝে বীরত্ব দেখানোর জোশ খুব গুরুত্বপূর্ণ। খুব ইগোসেন্ট্রিক।
এখন, আফগানিস্তানকে কেন্দ্রে রেখে গ্লোবাল পলিটিক্সের গুটি চালাচালি হবে। চীনের সাথে তালেবানদের কিছু কানে-কানে কথা হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বের মোড়লরা একঘরে করলে একেবারে বেকায়দায় পড়বে কি আফগানিস্তান? উত্তর না এবং হ্যাঁ। আফগানিস্তানের পাশেই ইরান। ইরান সরকারের মতাদর্শ আর তালেবানদের মতাদর্শ এক না। তবে কৌশলগত গলাগলি হতে পারে। যেভাবে তুরস্ক আর রাশিয়ার সাথে ইরানের ‘গুড রিলেশন’ আছে। তালেবানদের চিন্তা-ভাবনার সাথে সৌদি আরবের হুকুমতের অনেক মিল আছে। দেখা যাক্ সামনের দিনগুলো।