সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবেন তাই বিরোধীদের যেসব সুবিধা দিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ আগস্ট ২০২১, ১:৪১:২৯ অপরাহ্ন
অনুপম আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন হারাতে পারেন বুঝতে পেরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিন ইয়াসিন প্রথমবার স্বীকার করলেন। তাই তার সরকারের পতন ঠেকাতে, কোনোরকমে তার গদি টিকিয়ে রাখতে বিরোধী দলগুলোর সমর্থন চাইলেন। বললেন, বিরোধী দলীয় নেতাকে একজন সিনিয়র মন্ত্রীর মর্যাদা দেয়া হবে।
তাছাড়া তিনি আগামী বছর নির্বাচন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। এতে বলা হয়, আগামী মাসে পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরু হচ্ছে। সেখানে কঠিন এক পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে তাকে। দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী দলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম দাবি করে আসছেন- সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন মুহিদ্দিন। পক্ষান্তরে আনোয়ারের নিজের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।
তাই তিনিই সরকার গঠন করতে পারেন। এমন হুমকির মুখে করোনা মহামারি যেন আশীর্বাদ হয়ে আসে মুহিদ্দিনের জন্য। জরুরি অবস্থা জারি করেন তিনি। ফলে পার্লামেন্ট অধিবেশন স্থগিত হয়। এর ফলে তিনি এমপি বা বিরোধীদের চাপকে কাটিয়ে উঠার একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেন। কিন্তু সম্প্রতি তার সরকারের জোটের বেশ কিছু এমপি সমর্থন প্রত্যাহার করেছেন। এমনিতেই মুহিদ্দিন ইয়াসিন সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী। তার ওপর এমপিদের সমর্থন প্রত্যাহার তাকে নতুন এক বিপদে ফেলে দিয়েছে। তিনি তা ঠিক ঠিক বুঝতে পারছেন। তাই কোনো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন না করেই স্বীকার করেছেন, পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারেন। এ অবস্থায় বিরোধী দলীয় এমপিদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন মুহিদ্দিন ইয়াসিন।
শুক্রবার বলেছেন, তিনি সহজ পথ বেছে নিতে পারেন এবং পদত্যাগ করতে পারেন। কিন্তু বর্তমানে এমন কোনো এমপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের মতো সমর্থন নেই, যার ওপর ভিত্তি করে রাজা ওই নতুন নেতাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন। তিনি আরো বলেন, এমন অবস্থায় দেশে কোনো সরকার থাকবে না। তা হলে এই অবনতিশীল করোনা পরিস্থিতিতে দেশ বিকলাঙ্গ হয়ে পড়বে। এ জন্য তিনিই ক্ষমতায় থাকতে চান। তাই তিনি বেশ কিছু প্রস্তাব বা সুবিধা দেয়ার বিনিময়ে বিরোধী দলীয় এমপিদের সমর্থন চাইছেন। এ জন্য তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি। যেসব প্রস্তাব তিনি দেবেন, তার মধ্যে রয়েছে- প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মেয়াদ সীমিত করা, ভোটার হওয়ার বয়স ২১ বছর থেকে কমিয়ে ১৮ করা হবে, চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স প্রতিষ্ঠা করা হবে, বিরোধী দলীয় নেতাকে একজন সিনিয়র মন্ত্রীর মর্যাদা দেয়া হবে। এ ছাড়া করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাজেট বৃদ্ধি করবেন তিনি। গরিবদেরকে আরো অর্থ সহায়তা দেবেন।
টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, আমার এসব প্রস্তাবের উদ্দেশ্য হলো এই করোনা মহামারির মধ্যে সরকারকে অব্যাহতভাবে সচল রাখা। এক্ষেত্রে পার্লামেন্টে উভয় পক্ষের সমর্থন থাকতে হবে। আমি আর ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকতে চাই না। এটা ঠিক যে, এই ম্যান্ডেট একটি নতুন নির্বাচিত সরকারের হাতে তুলে দেয়া উচিত, অবশ্য যখন সময় আসবে। করোনা মহামারির ওপর নির্ভর করে, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, দেশের ১৫তম জাতীয় নির্বাচন আগামী বছর জুলাই মাস শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই হবে।
মাত্র এক সপ্তাহ আগে তিনি দেশবাসীকে বলেছিলেন, এখনও তার সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন আছে। তিনি সেপ্টেম্বরে পার্লামেন্টে আস্থা ভোট দেবেন। কিন্তু তার এক সপ্তাহ পরেই তিনি ইউ-টার্ন নিয়েছেন। কারণ, এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন জোটের সবচেয়ে বড় দল ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের কমপক্ষে ৮ জন এমপি সরকারের ওপর থেকে তাদের সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছেন। সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসা মুহিদ্দিন সরকারের পতনের জন্য এটাই যথেষ্ট। তার ওপর ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের দু’জন মন্ত্রীও মন্ত্রীপরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।