গজনির পতন হলো, সেই গজনি.. পালানোর সময় গভর্নর বন্দী আর এক টুকরো ইতিহাস
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১২ আগস্ট ২০২১, ৮:৪০:৩৭ অপরাহ্ন
রাজধানী গজনিতে আফগান যোদ্ধারা
অনুপম প্রতিবেদক: গজনির পতন হলো। কাবুল থেকে মাত্র ১৩০ কিলোমিটার দূরে। সেই গজনি, ইতিহাসের ওই যে গজনির সুলতান মাহমুদ, সেই গজনি, (সুলতান মাহমুদ সাবেক প্রাদেশিক রাজধানী গজনিকে এক বৃহৎ সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধশালী রাজধানীতে পরিণত করেন। তার সাম্রাজ্য বর্তমান আফগানিস্তান, পূর্ব ইরান ও পাকিস্তানের অধিকাংশ এলাকা জুড়ে ছিল।) গজনি প্রদেশের রাজধানী গজনি।
তালেবান কৌশলগত দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ গজনি শহর দখল করে নিয়েছে। এক সপ্তাহেরও কম সময়ে এটি দশম প্রাদেশিক রাজধানী দখল নেয়া হলো।
বিবিসি লিখেছে, গজনি শহরটি গুরুত্বপূর্ণ কাবুল আর কান্দাহার মহাসড়কের উপরে। দক্ষিণে তালেবানের শক্ত ঘাঁটির সাথে রাজধানী কাবুলের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়ক এটি।
গজনির গভর্নর দাউদ লাঘমানি পালানোর সময় বন্দি
ধারণা করা হচ্ছে, গজনির নিয়ন্ত্রণ নেবার ফলে তালেবানের শেষ পর্যন্ত খোদ কাবুল দখলের সম্ভাবনা বাড়ল। আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রাদেশিক রাজধানীর মধ্যে এক তৃতীয়াংশই এখন তালেবানের নিয়ন্ত্রণে। আল জাজিরা জানায়, গজনির গভর্নর দাউদ লাঘমানি নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ চেয়ে তালেবানদের হাতে গজনি ছেড়ে দিয়ে, পাশের ওয়ারদাক প্রদেশে ধরা পড়েন আফগান সরকারের পুলিশের হাতে আজ ১২ আগস্ট কয়েক ঘন্টা আগে।
প্রায় ৮ শ বছর আগের একখন্ড ইতিহাসের কথা মনে পড়লো। তাইমুর লংয়ের সৈন্যদের হাতে পালিয়ে যাওয়ার সময় ধরা পড়েছিলেন ওসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান বায়েজিদ। সেটা ছিল খুবই লজ্জাজনক পরাজয়। একটু পড়া যাক ইতিহাস থেকে-
‘‘অবশেষে ১৩৯৯ থেকে হুমকি-ধমকি চলতে চলতে ওসমানীয় সুলতান বায়েজিদ ও মোঙ্গল বীর তাইমুরের যুদ্ধ হল আংকারার নিকটবর্তী একটি স্থানে ১৪০২ সালের ২০ জুলাই। ইতিহাসে এটি ‘আংকারা যুদ্ধ’ নামে গ্রন্থিত। আক্রমণের আদেশ প্রথমে বায়েজিদ দিয়েছিলেন। বেপরোয়া এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তাইমুরের যুদ্ধকৌশলের জালে ধরা পড়েন। প্রচণ্ড গরমে পানির পিয়াসে কাতর বায়েজিদ বাহিনী। দুই পক্ষের সৈন্য সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে। একটি সূত্রমতে, তাইমুরের ১ লাখ চল্লিশ হাজার, বায়েজিদের ৮৫ হাজার। প্রথমে মোঙ্গলরা বায়েজিদের বাহিনীকে আগে বাড়তে দেয়।
কিন্তু বেশি জোশে বুদ্ধি নাশ।
এখন বায়েজিদের পুত্ররা পালাচ্ছে। সার্বীয় শ্যালক তার ক্যাভেলরি নিয়ে দুলাভাই বায়েজিদকে একা ফেলে পালাচ্ছে।
সুলতান বায়েজিদও ঘোড়া চড়ে পালাতে চেষ্টা করলে মোঙ্গলরা তার ঘোড়াকে হত্যা করে তাকে গ্রেফতার করে। এই প্রথম ও একমাত্র ওসমানীয় সুলতান প্রতিপক্ষের হাতে গ্রেফতার হলেন। তাইমুরের সামনে আনা হল বায়েজিদকে একটি লোহার খাঁচায় বন্দী করে। তাইমুর আনন্দে হাসেন। বন্দী সুলতান রাজাসুলভ কণ্ঠে বলেন, পরাজিতের সাথে মশকারি করা ঠিক না।
পরে তাইমুরীয় সাম্রাজ্যের অধিপতি তাইমুর জানান, সম্মানিত বন্দী শত্রুর অসম্মান করা হবে না। এটাও ছিল মশকারি, কেননা কিছু দিন পর, এক রাজকীয় ভোজসভার আয়োজন করে, বায়েজিদের সামনে, উপস্থিত অতিথিদের সামনে একে একে বায়েজিদের তিন স্ত্রী — গ্রীক, তুর্কি ও সার্বীয়, এই তিন স্ত্রীকে নগ্ন অবস্থায় আনা হয় মজলিশে। তাদেরকে ক্রীতদাসী বানিয়ে তাইমুরের সামনে খাবার পরিবেশন করানো হয়।’’ (বই- ক্রসেড আয়াসোফিয়া ও ইতিহাসের গুপ্তরহস্য, সারওয়ার চৌধুরী)