তালেবান কাবুলে পৌঁছার পথে, ইসলামাবাদ পৌঁছবে কবে, আমেরিকা-চীনের গোপন খেলা
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১২ আগস্ট ২০২১, ১:০২:২৮ অপরাহ্ন
অনুপম প্রতিবেদক : আফগানিস্তানে গোষ্ঠীগত প্রাধান্য বিস্তারের লড়াই এতোটা তীব্র যে পৃথিবীর ওই অঞ্চলটি যুদ্ধ মুক্ত থাকবার আশা করা যায় না। সেখানে শুধু ধর্মীয় চেতনা ক্রিয়াশীল না। গোষ্ঠীগত বঞ্চনার প্রতিশোধ নিতে, প্রাধান্য বিস্তারের বাহাদুরি প্রদর্শনের ইচ্ছাও কাজ করে। গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক এজেন্ডা আছে, সামাজিক ধর্মীয় সংস্কারের আন্দোলন আছে। উদারপন্থী ও গোড়াদের দ্বন্দ আছে। তালেবান এগিয়ে যাচ্ছে। গোষ্ঠীপ্রীতির কারণেই আফগান সেনাপ্রধানকে বরখাস্ত করা হয়ে থাকতে পারে। আফগানিস্তানের অর্থমন্ত্রী খালিদ পায়েন্দা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তালেবান দেশটির গুরুত্বপূর্ণ কাস্টমস দখল করে নেওয়ার পর এই ঘটনা ঘটেছে।
বিস্ময়কর সত্য হলো এই, প্রতিদিন যেভাবে খবর আসছে, তাতে দেখা যায়, ইতিহাসের সেই অধ্যায়গুলো বর্তমানে হাজির। তৈমুর লঙের সৈন্যরা দিকে দিকে জয় করছে, কিংবা সম্রাট বাবরের ফৌজের কাছে অমুক অঞ্চলের পতন ইত্যাদি। একেবারে আট/নয় শ বছর আগের চিত্র অবিকল। এই গোষ্ঠীগত দ্বন্দে সভ্যতার ফেরিওলারাও অংশীদার। তলে তলে তাদের অস্ত্র ব্যবসার প্রসার। আমেরিকার সাথে তালেবানদের প্রীতি ও দ্বন্দের ইতিহাস তো আছেই। আমেরিকার অস্ত্র ও অর্থ পেয়ে তারা রাশিয়াকে তাড়িয়েছিল। গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের গোষ্ঠী কই? চুপ কি সত্যি সত্যি? তালেবান ইসলামাবাদ পৌঁছতে পারার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় কি? তারপর? তালেবানদের সাথে চীনের সম্পর্ক কোন্ সমিকরণের ইংগিত দিচ্ছে? সবকিছু খোলাসা হবে কিছুদিনের ভিতরই, পর্যবেক্ষকদের ধারনা।
ছয় দিনে নয়টি প্রাদেশিক রাজধানী দখলে নেয়ার পর তালেবান যোদ্ধারা আগামী ৩০ দিনের মধ্যে রাজধানী কাবুল বিচ্ছিন্ন করতে পারে এবং ৯০ দিনের মধ্যে তারা অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের উদ্ধৃতি দিয়ে এ আশঙ্কা করেছেন মার্কিন এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা। খবর প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, নতুন মূল্যায়ন হলো- আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিদেশি সেনারা চলে যাওয়ার কারণে তালেবানদের দ্রুত আগ্রাসনের ফলে কাবুল কতক্ষণ টিকে থাকতে পারে।
কিন্তু এটি একটি পূর্ববর্তী উপসংহার নয়, যোগ করেন তিনি। বলেন, আফগান নিরাপত্তা বাহিনী আরও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে গতি পরিবর্তন করতে পারে।
এদিকে, বুধবার তালেবানরা আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলের বাদাখসান প্রদেশের রাজধানী ফাইজাবাদ দখল করে নিয়েছে। এ নিয়ে মাত্র ছয় দিনে নয়টি প্রাদেশিক রাজধানী দখল করে নিল গোষ্ঠীটি।
স্থানীয় একজন আইন প্রণেতার বরাতে আল-জাজিরা জানায়, তালেবানের হাতে ফাইজাবাদের পতন হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে তালেবানের সঙ্গে তীব্র লড়াই চালানো সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গত রাতে তীব্র চাপে পড়েন। এখন তালেবান পুরো শহর দখলে নিয়েছে। দুই পক্ষেরই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সংঘাতে।
কাবুল
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে দখল করা এলাকাগুলোতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ আরও মজবুত করতে শুরু করেছে তালেবান বাহিনী। উত্তরাঞ্চলের বড় শহর মাজার-ই-শরিফের প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে তারা। ফাইজাবাদের পতনের পর এখন প্রচণ্ড চাপে রয়েছে মাজার-ই শরিফ।
আফগান বাহিনীতে বর্তমানে সদস্য সংখ্যা তিন লাখ। রয়েছে মাঝারি ও দূরপাল্লার কামান, সাজোয়া যান ও ইউএফভি। আমেরিকার ব্যবহৃত সামরিক সরঞ্জামই ব্যবহার করছে আফগান বাহিনী। রয়েছে কমান্ডো ইউনিটও। এর পাশাপাশি আফগান বাহিনীতে রয়েছে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারসহ ১৬৭টি এয়ারক্রাফট।
গেল কয়েক বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পুনর্গঠন চলে আফগান সামরিক বাহিনীর। সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে নতুন করে গড়ে ওঠে আফগান সামরিক বাহিনী, যার প্রশিক্ষণের মূল দায়িত্বে ছিল মার্কিন সশস্ত্র বাহিনী। আফগানিস্তান পুনর্গঠনের বড় অংশই ব্যয় হয় দেশটির সামরিক বাহিনীকে ঢেলে সাজাতে। গেল বছর প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয় এই খাতে।
অন্যদিকে, তালেবানের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৮৫ হাজার। গোষ্ঠীটির বছরে ব্যয় দেড় বিলিয়ন ডলারের মতো। মূলত মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজির পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়া আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে পরিচালিত হয় তালেবান। সমরাস্ত্রের মধ্যে সোভিয়েত আমলের ট্যাংকের পাশাপাশি, আফগান বাহিনীর কাছ থেকে দখলে নেওয়া বিভিন্ন সাঁজোয়া যান অন্যতম। এছাড়াও স্বল্প পাল্লার কামান রয়েছে গোষ্ঠীটির কাছে।
প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক সমরাস্ত্র থাকা সত্ত্বেও, তালেবানের কাছে আফগান বাহিনীর অসহায় আত্মসমর্পণের কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে মূলত সমন্বয়ের অভাব ও দুর্নীতিকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আফগান সেনাদের মনোবল সংকটে জাতিগত বিভেদ এবং দ্বন্দ্ব আছে বলেই।