দুদকের ১৫ মামলা: শাহজালাল ফার্টিলাইজার প্রকল্পের ৩৯ কোটি আত্মসাৎ
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ আগস্ট ২০২১, ১:২৭:২২ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার শাহজালাল ফার্টিলাইজার প্রকল্পে দুই কর্মকর্তা ও ৮ ঠিকাদার মিলে প্রায় ৩৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে তারা এ টাকা আত্মসাৎ করেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সিলেট কার্যালয় ৬ মাসের অনুসন্ধানে এর সাক্ষ্য-প্রমাণ পায়। এর ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটির উপ-পরিচালক মো. নুর-ই-আলম মঙ্গলবার ওই ১০ জনের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা করেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালত বুধবার মামলাগুলো গ্রহণ করেন। আদালত সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আসামিরা হলেন- শাহজালাল ফার্টিলাইজার প্রকল্পের সাবেক সহকারী প্রধান হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা ও হিসাব বিভাগীয় প্রধান ফেনীর পশুরাম থানার পূর্ব ধনীকুণ্ডা গ্রামের নজির আহমদ খন্দকারের ছেলে খন্দকার মুহাম্মদ ইকবাল (৪১)। তিনি বর্তমানে রাজধানীর রমনা এলাকার ৮৬/৪ সিদ্ধেশ্বরীর বাসিন্দা। সাবেক রসায়নবিদ ও লক্ষ্মীপুরের রামগতি থানার পূর্ব চরমেহার গ্রামের গিয়াস উদ্দিন আহমদের ছেলে নেছার উদ্দিন আহমদ (৬০), তিনি বর্তমানে ঢাকার উত্তরা এলাকার ১১নং সেক্টরের ১০/বি রোডের ২/বি হাউজের ২য় তলার বাসিন্দা। তারা দুজনই বর্তমানে বরখাস্ত রয়েছেন। এসব টাকা আত্মসাতের হোতা হলেন এই দুই কর্মকর্তা।
৮ ঠিকাদাররা হলেন- মেসার্স টিআই ইন্টারন্যাশনালের প্রোপ্রাইটর খন্দকার মুহাম্মদ ইকবালের স্ত্রী মোছা. হালিমা আক্তার (৩৯), মেসার্স রাফী এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর ফেঞ্চুগঞ্জের কচুয়া বহর গ্রামের মো. মদচ্ছির আলীর ছেলে মো. নুরুল হোসেন (৪৬), ফালগুনী টেড্রার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কক্সবাজারের কুতুবদিয়া থানার সিকদার পাড়ার আবদুস সত্তারের ছেলে এএসএম ইসমাঈল খান (৫১), মেসার্স আয়মান এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর ঢাকার কাফরুলের ইব্রাহিমপুর এলাকার ৬৬৭নং বাসার মমিনুল হকের ছেলে সাইফুল হক (৪৭), মেসার্স এন আহমদ অ্যান্ড সন্সের প্রোপ্রাইটর ফেঞ্চুগঞ্জের কর্মধা গ্রামের আব্দুল মন্নানের ছেলে নজির আহমদ বচন (৫৮), মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর নোয়াখালীর চাটখিল থানার পুরুষোত্তমপুর গ্রামের গোলাম জিলানীর ছেলে, বর্তমানে ঢাকার মিরপুর এলাকার আরামবাগ হাউজিংয়ের ৭নং সেকশনের ডি রোডের ২২ বাসার মো. হেলাল উদ্দিন (৪১), মেসার্স ড্যাফোডিলস ইন্টারন্যাশনালের প্রোপ্রাইটর ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানার নোয়াপাড়া খন্দকার বাড়ির আবু তালেব খন্দকারের ছেলে, বর্তমানে ঢাকার আশকোনা এলাকার ৪৩১ নম্বরের বাসিন্দা মো. জামশেদুর রহমান খন্দকার (৩৮), মেসার্স সাকিব ট্রেডার্সের প্রোপ্রাইটর ও ময়মনসিংহের মিলনবাগের ২৩/৭/খ-এর মৃত ফজলুর রহমান চৌধুরীর ছেলে, বর্তমানে ফেঞ্চুগঞ্জের চ/৪৪ কালনী হাউজের বাসিন্দা মো. আহসান উল্লাহ চৌধুরী (৫৮)।
এজাহারে বলা হয়, প্রকল্পের সাবেক সহকারী প্রধান হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা ও হিসাব বিভাগীয় প্রধান খন্দকার মুহাম্মদ ইকবাল ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন কাজের ৬০টি ভাউচারমূলে ৪৫ লাখ ৮৫ হাজার ৭৮৩ টাকা অগ্রিম উত্তোলন করেন। ২৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৭৪ টাকার প্রকৃত বিল-ভাউচার দাখিল করেন। বাকি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৯ টাকার ভুয়া বিল-ভাউচার জমা দিয়ে আত্মসাৎ করেন। প্রকল্পের সাবেক রসায়নবিদ নেছার উদ্দিন আহমদ একই সময়ে বিভিন্ন কাজের ৫৮টি ভুয়া বিল-ভাউচারমূলে একইভাবে ৯ লাখ ৮৩ হাজার ৬২০ টাকা আত্মসাৎ করেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রকল্পের ফটোকপি ও আপ্যায়ন বিল পুনঃভরণের নামে খন্দকার মুহাম্মদ ইকবাল ও নেছার উদ্দিন আহমদ মিলে ৪৪টি ভুয়া বিল-ভাউচারে ৩৯ লাখ ৫ হাজার ৬৫ টাকা আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া খন্দকার মুহাম্মদ ইকবাল নিজের স্ত্রী মোছা. হালিমা আক্তারের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৭টি ভুয়া বিল-ভাউচারে ২৪ কোটি ৯৬ লাখ ৮৭১ টাকা, ঠিকাদার মো. আহসান উল্লাহ চৌধুরী ৪টি ভুয়া বিল-ভাউচারে ৪৫ লাখ ৩৭ হাজার ৮৭৫ টাকা, ঠিকাদার নুরুল হোসেন একাধিক প্রতিষ্ঠানের ৭টি ভুয়া বিল-ভাউচার এবং দোতলা সেলস অফিসের পূর্ত কাজের নামে ৫৬ লাখ ১ হাজার ৩৬৩ টাকা, ঠিকাদার এএসএম ইসমাঈল খান প্রকল্প পরিচালকের বাংলো ও সাইট অফিস মেরামত কাজের নামে ৫ লাখ ৩ হাজার ৬৬৬ টাকা, ঠিকাদার সাইদুল হক প্রকল্পের হাউজিং কলোনির টয়লেটের স্যুয়ারেজ লাইন ও ওয়াটার সাপ্লাইয়ের লাইন কাজের নামে ৪ লাখ ১৩ হাজার ২০৯ টাকা, ঠিকাদার নাজির আহমদ বচন প্রকল্পের মার্কেট পার্ট-বি এর পূর্ত কাজের নামে ১৭ লাখ ৩৭ হাজার ৪৭১ টাকা, ঠিকাদার মো. হেলাল উদ্দিন ১৭টি ভুয়া বিল-ভাউচারে ৩ কোটি ১৮ লাখ ৯৮ হাজার ৪০২ টাকা, ঠিকাদার মো. জামশেদুর রহমান খন্দকার ৬০টি ভুয়া বিল-ভাউচারে ৯ কোটি ১০ লাখ ৪০ হাজার ৩৫১ টাকা, ঠিকাদার মো. হেলাল উদ্দিন ১৭টি ভুয়া বিল-ভাউচারে ৩ কোটি ১৮ লাখ ৯৮ হাজার ৪০২ টাকা আত্মসাৎ করেন। মামলাগুলোর তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদক সিলেটের উপ-পরিচালক মো. নুর-ই-আলম এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, তদন্তকালে আসামিদের গ্রেফতার করা হবে। তথ্যসূত্র: সারাবাংলা, যুগান্তর, মানবজমিন, সমকাল, বিডিপ্রতিদিন