বিসিএ’র সাথে এনএইচএস এর কোভিড টিকা গ্রহণ উদযাপিত
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১০ জুলাই ২০২১, ২:১৯:০৯ অপরাহ্ন
অনুপম লন্ডন প্রতিনিধি: কোভিড-১৯ মহামারিতে ব্রিটেনে বাংলাদেশী ক্যাটারার্সদের প্রতিনিধিত্বমূলক সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন (বিসিএ) ব্রিটেনব্যাপী তাদের সংগঠনের মাধ্যমে কমিউনিটির সেবা প্রদান করে প্রশংসিত হয়েছে। কমিউনিটিতে করোনা সময়ে বিসিএ‘র সেবা ও জনসচেতনতামূলক কাজের জন্য ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) কোভিড ভ্যাকসিন কার্যক্রমের পরিকল্পনার অংশ হিসাবে বিসিএ ও এনএইচএস এর কোভিড ভ্যাকসিনেটেড সেলিব্রেশন অনুষ্ঠিত।
‘সেলিব্রেটিং দি কনট্রিবিউশন অফ দি ব্রিটিশ বাংলাদেশী ক্যাটারিং ইন্ডাস্ট্রি ইন কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন আপটেইক এন্ড লুকিং টু দি ফিউচার ‘ শিরোনামে ৭ জুলাই বুধবার বেলা ১টায় ভার্চুয়াল মাধ্যম জুম এ অনুষ্ঠানটি হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ নিয়ে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে ধর্মীয় ও সামাজিক কিছু কারণে কিছুটা তথ্য বিভ্রান্তি ছিল। কিন্ত বিসিএ সহ ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও কমিউনিটি সংগঠকদের ঐক্যবদ্ধ সচেতনতামূলক ক্যাস্পেইনের মাধ্যমে ভ্যাকসিন কার্যক্রমটি সফলভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে। বিসিএ লকডাউন সময় থেকে যুক্তরাজ্যব্যাপী এনএইচএসসহ ফ্রন্টলাইন কর্মীদের খাবার প্রদান, এনএইচএস স্টাফ ও কেয়ারারদের জন্য ৫০% ডিসকাউন্টে খাবার কেনার সুযোগসহ ডাইভার্স কমিউনিটিতে অনন্য ভূমিকা রেখেছে। ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস বিসিএ সহ বাংলাদেশী কমিউনিটিকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মিনিস্টার ফর কোভিড ডেভোলাপম্যান্ট নাদিম জাওয়ালী এমপি, মিনিস্টার ফর লন্ডন এন্ড পার্লামেন্টারী আন্ডার সেক্রেটারী অফ স্টেইন্ট পল স্কলি এমপি, এনএইচএস ই এন্ড আই এর ডক্টর নাঈম আহমেদ।
চ্যানেল এস এর হেড অফ প্রোগ্রাম ফারহান মাসুদ খান এর সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিসিএর প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিম, সেক্রেটারি জেনারেল মিঠু চৌধুরী, বিসিএ’র সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিজনেস লীডার পাশা খন্দকার এমবিই, নিউক্যাসেল বাংলাদেশী এসোসিয়েশন এর চেয়ারপারসন ও বিশিষ্ট ক্যাটারার্স মাহতাব মিয়া।
মিনিস্টার অফ কোভিড ডেভোলাপম্যান্ট নাদিম জাওয়ালী এমপি ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইনে লীডারশীপ ভূমিকার জন্য বিসিএ নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশী কমিউনিটিতে করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণ নিয়ে কিছুটা তথ্য বিভ্রান্তি ছিল। কিন্তু বিসিএ কমিউনিটির প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন হিসাবে বাংলাদেশী কমিউনিটিকে সঠিক তথ্য দিয়ে করোনা ভ্যাকসিন নিতে অনুপ্রেরণা দেয়ায় ভ্যাকসিন যোগ্য ৮৬% মানুষ প্রথম ডোজ গ্রহন করেছেন। এবং ইতিমধ্যে ৬৩% সেকেন্ড ডোজ নিয়েছেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে নাদিম জাওয়ালী এমপি জানান, শিশুদের করোনা ভ্যাকসিন গ্রহনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্ট থেকে কোন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আসেনি। এজন্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। তবে ফ্রন্ট লাইন ওয়ারকার ও কেয়াররারদের পরিবারের ১৬-১৭ বছর বয়সীদের করোনা ভ্যাকসিন দেবার ক্ষেত্রে সরকার একটি কর্মপরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে।
মিনিস্টার ফর লন্ডন এন্ড পার্লামেন্টারী আন্ডার সেক্রেটারী অফ স্টেইট পল স্কলি এমপি বলেন, বিসিএ লকডাউনের শুরু থেকে ফ্রন্ট লাইন ওয়াকারদের জন্য যুগান্তকারী কাজ করেছে। তিনি পেনডামিক সময়ে এনএইচএস এর জন্য তহবিল সংগ্রহকারী শতবর্ষি দবির চৌধুরীর অনুকরণীয় ও অনুপ্রেরণাদায়ী কাজের কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন সহ বাংলাদেশী কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ দীর্ঘ ১৮ মাস থেকে সংকটকালে কমিউনিটির পাশে থেকে নানাভাবে কাজ করছেন।
১৯ জুলাই অন্য সব কিছুর মতো রেস্টুরেন্টও খুলছে। আমাদের সকলেরর উচিত ভ্যাকসিন প্রয়োগ নিশ্চিত করা । যাতে সকলে রিস্ক মিনিমাইজ করে নিরাপদভাবে ব্যবসা ও কাস্টমার সেবা দিতে পারি। সংকট উত্তরণে সকলে যুগপথভাবে আগামী সময় কাজ করার বিকল্প নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে পল স্কলি এমপি বলেন, ফেইস মাক্স স্বাস্হ্য ঝুঁকি কমাতে পারে এবং বিশেষ করে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ও জনসমাগমে এর ব্যবহার আমাদের ঝুঁকিমুক্ত রাখবে।
এনএইচএস ই এন্ড আই এর ডক্টর নাঈম আহমেদ বলেন, কোভিড-১৯ শুধু আমাদের ব্যবসায় ক্ষতি করেনি। এটা আমাদের ডাইভার্স কমিউনিটিতে সার্বিকভাবে বিরাট ক্ষতি করেছে। আমরা অনেককে হারিয়েছি তার প্রধান কারণ হচ্ছে – ভ্যাকসিন না নেয়া। তবে আশার কথা হলো- ১ লাখ ১৭ হাজার বাংলাদেশী ভ্যাকসিন নিয়েছেন। যেখানে বিসিএ নানা সচেতনতামূল ক্যাম্পেইনে অভূতপূর্ব সহায়তা করেছে।
ডক্টর নাঈম আহমেদ আশা প্রকাশ করে বলেন , কমিউনিটিতে ভ্যাকসিন গ্রহন নিশ্চিত হলে কারী ইন্ড্রাস্ট্রি আবার ঘুরে দাঁড়াবে। এছাড়াও তিনি এনএইচএস এর ভ্যাকসিন কার্যক্রমে বাংলাদেশী কমিউনিটির মসজিদ কর্তৃপক্ষ , কমিউনিটি সেন্টার ও কমিউনিটি লীডারদের অবদানকে কৃতজ্ঞতা চিত্তে স্বরণ করেন।
বিশিষ্ট বিজনেস লীডার ও বিসিএর সাবেক প্রেসিডেন্ট পাশা খন্দকার এমবিই এনএইচএস কে বিসিএ ও বাংলাদেশী কমিউনিটির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সকলের সমন্বিত ও সর্বাত্মক চেষ্টায় এথনিক কমিউনিটিতে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম সফল হচ্ছে। এজন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
বিসিএ প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিম কোভিড মহামারিতে জীবন বাজি রেখে এইএইচএস স্টাফদের কাজ করায় সংঠনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ নিয়ে এথনিক মাইনোরিটি কমিউনিটিতে অনেক তথ্য বিভ্রান্তি ছিল। বিসিএ ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের নির্দেশিত সকল কাজে কমিউনিটির পাশে থেকে কাজ করেছে।
প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিম, কারি ইন্ড্রাস্ট্রিকে আগামী উইন্টার সময়ের সম্ভাব্য বিপর্যয় থেকে বাঁচাতে যত দ্রুত সম্ভব বোস্টার ভ্যাকসিন নিশ্চিত করার জোর দাবী জানান।
এছাড়াও তিনি বিসিএর পক্ষ থেকে এনএইচএস এর পাশে থেকে কমিউনিটির সেবায় কাজ করার প্রত্যয়ের কথাও বলেন।
বিসিএ সেক্রেটারী জেনারেল মিঠু চৌধুরী বলেন, ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের বর্ণাঢ্য ৭৩ বছর পালনে বিসিএ ও কিছু ভালো কাজের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করছে এটা আমাদের জন্য গর্বের।
করোনা মহামরীর সময়ে যুক্তরাজ্যব্যাপী বিসিএ এর নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা বিভিন্ন হাসপাতাল ও অন্যান্য ফ্রন্ট লাইন ওয়ারকারদের মাঝে ১ লক্ষাধিক খাবার প্যাকেট বিতরণ করেছে। এছাড়াও ৫০% ডিসকাউন্টে রেস্টুরেন্ট ও টেকওয়ে এনএইচ স্টাফ ও কেয়ার হোমে খাবার সংগ্রহের সুবিধা দেয়া দিয়েছে।
সেক্রেটারী জেনারেল মিঠু চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ ১৮ মাস থেকে গ্লোভাল কমিউনিটি সংকটে আছে। বাংলাদেশী কারী ইন্ড্রাস্ট্রিও মারাত্নকভাকে ক্ষতিগ্রস্থ । বিসিএ বিশ্বাস করে, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভ্যাকসিন কার্যক্রমকে সফল করে আমরা একটি নিরাপদ কমিউনিটিতে ফিরে যেতে পারবো।
নিউক্যাসেল বাংলাদেশী এসোসিয়েশন এর চেয়ারপারসন ও বিশিষ্ট ক্যাটারার্স মাহতাব মিয়া বলেন, কমিউনিটিতে ধর্মীয় ও সামাজিক নানা রিউমারসের কারণে ভ্যাকসিন গ্রহনে প্রথমে কিছু মানুষের মাঝে অনীহা থাকলেও পরে বিসিএ সহ কমিউনিটি লীডারদের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশী কমিউনিটি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।
হেড অফ ভ্যাকসিন ইক্যুয়ালিটিস আব্দুল হামিদ বলেছেন, তথ্য বলছে- যারা দুটো ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাদের কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা খুবই কম। তাই সকলের উচিত ভ্যাসসিন গ্রহণ করা এবং অন্যকেও এই তথ্যটি জানিয়ে অনুপ্রাণীত করা।
এছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ক্যাটারার্স আসমা খান, ডেন্টিস এন্ড ডেন্টাললীড এর ডা: ইফাত আহমেদ, শপওয়েল কমিউনিটি ট্রাস্ট এর রাহানাহ আহমেদ, আমার ডক্টর এর ডা: রাফিয়া মিয়া প্রমূখ ।
ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানটির আয়োজনে কারিগরি ও সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন মেম্বারশীপ সেক্রেটারী ইয়ামীম দিদার , প্রেস এন্ড পাবলিকেশন সেক্রেটারী ফরহাদ হোসেন টিপু ও অফিস ম্যানেজার আলী বাবর চৌধুরী ।