বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ বিজ্ঞানী সাদিয়ার স্প্রে করোনা ধ্বংসে ষোলআনা কার্যকর
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জুলাই ২০২১, ১২:৩০:২৯ অপরাহ্ন
ভলটিক স্প্রে সব ধরনের করোনাভাইরাস, ইবোলা ভাইরাস, এভিয়েন ফ্লু, ইনফ্লুয়েঞ্জা এ, সার্স, এইচআইভি বি এবং অন্যান্য জীবাণু ধ্বংস করতে পারে
অনুপম প্রতিবেদক: ১৪ মাসের গবেষণায় সফল হলেন সাদিয়া। আবিস্কার করলেন করোনাভাইরাস ধ্বংসকারক এ্যান্টিসেপ্টিক স্প্রে। বৃটেনের হাসপাতালগুলো জানিয়েছে করোনা ধ্বংস করতে এ স্প্রে ‘হান্ড্রেড পার্সেন্ট ইফেক্টিভ’। ইতোমধ্যে ১০ মিলিয়ন পাউন্ডের অর্ডার হয়েছে এ স্প্রে ক্রয় করার। ১৩ দেশ আগ্রহী হয়েছে এ স্প্রে নেওয়ার জন্যে।
মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নতুন একটি জীবাণুনাশক স্প্রে আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণ ব্রিটিশ বিজ্ঞানী সাদিয়া খানম। ২৬ বছর বয়সী সাদিয়া ভলটিক নামের এই জীবাণুনাশক তৈরি করেছেন, যা যেকোনো বস্তুর সারফেসে স্প্রে করা হলে সেটি দুই সপ্তাহের জন্য জীবাণুমুক্ত থাকবে।
কোভিড মহামারি মোকাবিলায় এই উদ্ভাবনকে বড় ধরনের আবিষ্কার হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে এবং ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা এনএইচএসসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এটিকে অনুমোদন দিয়েছে।
এটা কি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কাজ করে?
এমন প্রশ্নের জবাবে বিবিসি বাংলার কাছে বিজ্ঞানী সাদিয়া খানম দাবি করেন, তার আবিষ্কৃত ভলটিক সব ধরনের করোনাভাইরাস ধ্বংস করতে সক্ষম। তিনি বলেন, আমি এমন একটা জিনিস তৈরি করতে চেয়েছি যা সবাই ব্যবহার করতে পারে। ভলটিক সব ধরনের ভ্যারিয়্যান্টের বিরুদ্ধে কাজ করে। কারণ আমি এই ভাইরাসের আসল স্ট্রেইন নিয়ে কাজ করেছি। যেহেতু আমি করোনাভাইরাসের আসল জিনিসটিকে মেরে ফেলতে সক্ষম হয়েছি, তাই এটি অন্যান্য ধরনের করোনাভাইরাসও ধ্বংস করতে পারবে।
সাদিয়া আরও বলেন, যখনই এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি একটি ঘরে প্রবেশ করে, তখন সেই ঘরের ভেতরে জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে। সারাক্ষণ ঘরের সবকিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা কঠিন। কিন্তু এই ভলটিক স্প্রে দিয়ে ঘরটিকে সারাক্ষণই জীবাণুমুক্ত রাখা সম্ভব। যেমন- আমি যদি কোনো একটি ঘর ভলটিক দিয়ে পরিষ্কার করি তাহলে ওই ঘরটি ১৪ দিনের জন্য সুরক্ষিত থাকবে।”
সাদিয়া তার আবিষ্কৃত ভলটিক স্প্রে সব ধরনের করোনাভাইরাস, ইবোলা ভাইরাস, এভিয়েন ফ্লু, ইনফ্লুয়েঞ্জা এ, সার্স, এইচআইভি বি এবং অন্যান্য জীবাণু ধ্বংস করতে পারে বলে জানিয়েছেন।
ভলটিক কী
সাদিয়া খানম বলেন, এই জীবাণুনাশ প্রক্রিয়ার একটি অংশ হচ্ছে- কোনো জীবাণু যদি কোনো কিছুর সংস্পর্শে আসে তখন তাকে ধ্বংস করে ফেলা। অর্থাৎ কোনো কিছুর পৃষ্ঠ বা সারফেসের ওপর যদি কোনো ভাইরাস থাকে, এর সাহায্যে তাকে সঙ্গে সঙ্গেই মেরে ফেলা যায়।
তিনি জানান, যে এটি চামড়া থেকে শুরু করে কাঠ, লোহা থেকে কাপড়- সব ধরনের সারফেসের ওপর কাজ করে বলে গবেষণায় তিনি দেখতে পেয়েছেন। এই প্রক্রিয়ায় কোনো কিছুর সারফেসের ওপর একটি কোভ্যালেন্ট বন্ড তৈরি হয় যা সেখানে চৌদ্দ দিনের জন্য একটি শক্ত প্রাচীর তৈরি করে। এই বন্ড খুবই শক্তিশালী, কোনো কিছুই এটিকে ভাঙতে পারে না। এভাবে এটি টানা দুই সপ্তাহের জন্য যেকোনো জীবাণু থেকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। এসব জীবাণুর মধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক, করোনাভাইরাস, ইবোলা ভাইরাস, এইচআইভি বি ইত্যাদি।
ভলটিক স্প্রে কীভাবে কাজ করে- এ বিষয়ে বিজ্ঞানী সাদিয়া জানান, এই ভলটিক স্প্রে খুবই উচ্চ চাপের মধ্যে কাজ করে। নানা ধরনের প্রয়োগের ফলে এর বিভিন্ন রকমের উপকারিতা আছে, বিশেষ করে বৈজ্ঞানিক উপকারিতা। আমি এমন একটা জিনিস তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি যা যে কোনো জীবাণুকে ধ্বংস করতে পারে, ধ্বংস করতে পারে জীবাণুর ডিএনএ এবং যে কোনো ধরনের ডিএনএ।
বর্তমানে বাজারে যেসব জীবাণুনাশক পাওয়া যায় তার বেশিরভাগই খুব বেশি সময় ধরে সুরক্ষা দিতে পারে না। কিন্তু সাদিয়া খানম দাবি করছেন যে তার এই ভলটিক স্প্রে অন্যান্য জীবাণুনাশকের চেয়ে আলাদা এবং একবার স্প্রে করার পর সেটি চৌদ্দ দিন কার্যকর থাকে।
তিনি বলেন, বাজারে যতো ধরনের জীবাণুনাশক আছে আমি সেগুলোর সীমাবদ্ধতা নিয়ে গবেষণা করেছি। কারণ আমি এমন এটা জিনিস তৈরি করতে চেয়েছি যাতে সবকিছুর উত্তর পাওয়া যায় এবং বর্তমানে যেসব জীবাণুনাশক পাওয়া যায় সেগুলোর সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করতে পারে।
সাদিয়া বলেন, অনেক জীবাণুনাশক বিষাক্ত। কিন্তু তার ভলটিক স্প্রে যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিকর না হয় কিংবা বর্তমানে ও ভবিষ্যতে যাতে এর কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না দেয় সে বিষয়ে তাকে সতর্ক থাকতে হয়েছে।
স্প্রের বিষয়ে আরেকটু পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে সাদিয়া বলেন, আমি এমন একটা জিনিস তৈরি করতে চেয়েছি যা স্থায়ী হবে। আরও গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে- আমি হাসপাতালগুলোকে সাহায্য করতে চেয়েছি। এমন জিনিস তৈরি করতে চেয়েছি, যা এই কঠিন সময়ে তাদের সাহায্য করবে- যা বিছানা, কম্বল, পর্দা, বালিশ, কুশন, সোফা ইত্যাদি নরম জিনিসের ওপর কাজ করবে। অনেক জীবাণুনাশক আছে যেগুলো বিষাক্ত এবং নরম জিনিসের ওপর ব্যবহার করা যায় না। ভলটিক ধাতব পদার্থের বেলাতেও কাজ করবে। ধাতব নয়- এমন জিনিসেও কাজ করবে।
সাদিয়া খানম স্যালফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োমেডিকেল সায়েন্স এবং চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে জিনোমিক মেডিসিন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।