সিলেট বিভাগের নদীগুলোর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করছে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ জুন ২০২১, ১০:১০:২০ অপরাহ্ন
অনুপম প্রতিবেদক: যদিও মুষলধারে টানা বৃষ্টি হয়নি গত পনর দিন, তবু থেমে থেমে বর্ষার বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো দশ মিনিটের ভারী বৃষ্টিতে জল থৈ থৈ চৌদিক। বাড়তে শুরু করেছে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন নদী খাল বিলের পানি। সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা আর কুশিয়ারা পানিও বাড়তে শুরু করেছে। পাহাড়ি ঢলের কারণে ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে সিলেটের গোয়ানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, সুনামগঞ্জসহগ কয়েকটি এলাকার নিম্নাঞ্চল। এসব এলাকায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার ২৯ জুন সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীর পানি ৫৬ সেন্টিমিটার এবং গোয়াইনঘাটের সারি নদীর পানি বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর যাদুকাটা নদীর পানি বাড়ার ফলে তাহিরপুর উপজেলার বেশ কিছু সড়ক তলিয়ে গেছে।
এদিকে সিলেটে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। জুন মাসের ২৯ দিনে সিলেট স্টেশনে ৬২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর সুনামগঞ্জে ৭৫৭ মিলিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ৫৩৪ সেন্টিমিটার, কানাইঘাটে ৬৪৮ এবং হবিগঞ্জ স্টেশনে ২২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
অন্যদিকে ২৭ জুন সকাল ৬ টা থেকে ২৮ জুন সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত সিলেটে ১১৯ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর ২৮ জুন সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ২৯ জুন সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত২৭ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টাও সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই অঞ্চলের সুরমার সুরমা নদীর পানিও বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে, ধরে টানা বৃষ্টিপাত ও ঢলে সুনামগঞ্জের সকল নদী-নালার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃষ্টিপাতের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষরা ঘরবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। ফার্মেসিসহ কিছু দোকান-পাট খোলা থাকলেও বৃষ্টির কারণে লোকজন ঘর থেকে বের হতে পারেন নি। টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে বন্যার আশংকা করছেন নদী তীরের অনেকেই। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদীর পানি মঙ্গলবার বিকাল ৩ টায় সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর পয়েন্ট এলাকায় বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে ৭.৪৪ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর পানি বিকাল ৩ টায় বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে ৮.১৩ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১১৬ মিলিমিটার ও তাহিরপুর উপজেলার লাউড়েরগড় এলাকায় ১৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পওর শাখা -১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাবিবুর রহমান বলেন,‘ টানা বৃষ্টিপাত হওয়া ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সুনামগঞ্জের সব নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন দিন ধরেই নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে। সুনামগঞ্জের পাশাপাশি ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ৭২ ঘণ্টা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। এতে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।’
সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বললেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবারে জুন মাসে সুনামগঞ্জে ২৯ ভাগ বৃষ্টি কম হয়েছে। আগামী ১০ দিন সুনামগঞ্জ অঞ্চলে নিয়মিত বৃষ্টিপাত হবে। ১০ দিনে ৬৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। আগামী তিন দিনে ১৮০ থেকে ২১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হবে। সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জি ও মেঘালয় এলাকায় আগামী তিন দিন ৩৫০ থেকে ৪৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হবে। তবে সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় পর্যাপ্ত পানি না থাকায় বন্যার তেমন সম্ভবনা নেই।’
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, ‘টানা বৃষ্টিপাতে সুনামগঞ্জের সব নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে সতর্ক করা হয়েছে ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলার ১১ উপজেলায় ৭৭ লাখ নগদ টাকা পাঠানো হয়েছে। আরও ৪৪ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। নদীর পানি বৃদ্ধি বিষয়ে সার্বিক খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।’
মৌলভীবাজারের খরস্রোতা খোয়াই নদীর পানি বেড়েছে। হবিগঞ্জের কুশিয়ারা, কালনী, ভেড়ামোহনা ও বশিরা নদীগুলোর পানি বেড়েছে।