শঙ্খ-আহ্বান : : অমিত রেজা চৌধুরী
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ জুন ২০২১, ১০:৩৭:১৬ অপরাহ্ন
শঙ্খ-আহ্বান // অমিত রেজা চৌধুরী
১
অশ্বমেধের শ্রুতি থেকে সাতটা সারেঙ্গী ছড়িয়ে পড়ল পাশের নদীতে
.
চতুরঙ্গ থেকে পালিয়ে এসে পটের বিবি ও গোলামরা কি
আবারও উনিশ শতকীয় ক্ষণজন্মা হয়ে উঠতে চাইবে?
.
রক্তশপথ সময়, ছোট্ট বুদ্ধমূর্তিটা জড়িয়ে ধরুক
তাবৎ এবস্ট্রাকশন, ভারাক্রান্ত হৃদয়ের সাঁকো
.
লগ্ন হতে চাওয়ার গভীরেই কি প্রকৃত একাকীত্ব অমোঘ বসে থাকে?
২
দুয়ার আগলে ঘুমিয়ে পড়েছিল কে?
.
তোমার আমার গুড়িয়া, অপ্রতীকী হয়ে আর ফিরতে না পারা
.
দুয়ার আগলে তামাম নাচের মুদ্রা, ব্রতকথা লুকিয়ে ফেলছিল কে গা?
.
তোমার আমার রুয়েলিয়া, ব্ল্যাকবোর্ডে জমা চকের দাগ, শিশির
৩
শুঁড় তুলে হৃদয়ের হস্তিনী পানি ছুঁড়ছে ক্রমশ সূর্যের উনুনে—
.
উড়ন্ত এই তীর্থযাত্রার নীচ দিয়ে,
.
অসংখ্য ধুতরাফুলের মাঝে নগ্ন দাঁড়িয়ে ছিলে তুমি।
.
পতঙ্গ এক ব্যর্থ ইন্টারপ্রেটার কবন্ধসারির।
.
এত যে সাফল্য, তবু বারবার মাতৃগর্ভেই ফিরতে চেয়েছে নিশীথ!
৪
ক্বাসিদা আর রুদালির মাঝে যতটা ফারাক,
যেটুকু দীর্ঘমহাপয়ার লিখবার প্রস্তুতি মনোলিথের মাঠ জুড়ে,
.
মাউথঅর্গান বাজাতে-বাজাতে সরু পাহাড়ি রাস্তা হয়ে যে
সমতলের অর্থহীনতার দিকে ক্রমশ, সে আমার সহোদর
৫
নুন-জলের সম্পর্ক আমাদের,
মন ও মণিমালার জাগরণ যেমন
.
প্রতিটি নর ও নারীর মুখে ইতিহাস
আমাদেরই মরামুখ খুঁজে ফিরে
.
তবু বাঞ্ছা হয়,
ট্রেনের চেইন টেনে পথিমধ্যে নামিয়ে নিবে কেউ,
পাশার সমূহ ছক মুছে দিবে
৬
পরস্পরের খোলস কুড়াবার ফাঁকে
আমরা একে অন্যের মেটাফেজ হয়ে উঠেছি—
.
পরস্পরকে নাগাসন্নাস্যে রাজি করবার ছলে
উদোম হয়ে শীর্ষাসন করেছি,
তীর্থপথে ফুলচন্দনের নীচে নিরোধক বেচেছি
.
মিউজিক ভালবাস তবু র্যাটেল-স্নেক পুষতে চাও নি,
তার কামড়ে নীলকণ্ঠী হবার ভয়ে? কেমন হাওয়ারাত্রি তোমার?
.
তোমার নাভিপদ্মে ঈশ্বর তবু কেন যে ঈশ্বরীর পায়ে
করজোড়ে তামাম দুনিয়ার জন্য ভিখ মাঙেন?
৭
সহসা বালিদেশে জেগে উঠেছে কিছু হাড়গোড়, রঙিন বেণী,
স্মৃতিআয়না আর অবিশ্বাসী দু’জোড়া লোচন
.
কাছেপিঠে কোথাও সরোবর নেই, তেলসন্ধানী সামরিক তাঁবু নেই,
বেদুইনদের কিসসায় সঙ্গী ভেড়ার দলে শ্রমণাঋতুও নেই
.
বিবাহবার্ষিকী ফিরে ফিরে এলে
অন্তত একটি করে গাছ লাগানো উচিত, রাক্ষসের
৮
পুরনো মডেলের একটা হুইলচেয়ার জোড়াতালি দেয়া ছাড়া
কেই বা কী করতে পেরেছি, ঢেউ জব্দ হবার পাশে?
.
গর্ভবতীর জিভে টক বা মিষ্টি যেমনই লাগুক,
তেতুলকাঠ শ্মশানে একটু বেশিই জ্বলে
.
এক্যুরিয়ামের মধ্যে নাগাসাধু হয়ে লাফ দেই
বরং মাছেরা চেটেপুটে খেয়ে ফেলুক আমাদের আগামী।
৯
কুরুক্ষেত্র নয়, লড়াই যখন মস্তিষ্কে মস্তিষ্কে
.
বেণীসংহার ছাড়ো নেটিজেন,
চক্রব্যূহের মাঝে নিজেকে দাঁড় করিয়ে
তীরবিদ্ধ হবার হিম্মত আছে তোমার?
বিপ্লবের কথা তোমার জবানে মানায় না।
.
গ্রীষ্মকালের ধারণা আমাদের গ্রীষ্মকালের চেয়েও সুন্দর।
১০
সুসংবাদের মতো অনুজ্জ্বল নয় শ্যামাপোকার রাত,
সুসংবাদের মতো অশ্লীল এই কাল্পনিক সুখে থাকা আমাদের।
.
মনে রেখো, রাজনীতিবিমুখ জীবন তোমার
সন্তানদের দ্বীপান্তরে বাধ্য করবে!
.
লুপ্তডানা ফিরে এসো; আপোষ তোমায় ভস্ম করে দেবার আগে
ফসফরাস হয়ে নিজেই ছড়িয়ে পড়ো।
অমিত রেজা চৌধুরী
কবি গল্পকার প্রাবন্ধিক, অর্থনীতিতে এম এ, জন্ম ও বসবাস বগুড়া, টেলিকমিউনিকেশনে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। লেখেন ছোটকাগজ আর ফেসবুকে।