সন্তান মাদকাসক্ত কিনা বুঝবেন যেসব লক্ষণে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ অক্টোবর ২০২২, ৭:৩৬:৫৭ অপরাহ্ন
আপনার সন্তানের মধ্যে এসব লক্ষণ দেখলে দেরি করবেন না। দ্রুত তার সঙ্গে খোলাখুলিভাবে কথা বলুন। কখনো সন্তানের প্রতি চড়াও হবেন না কিংবা তাকে মারধর করবেন না। তাকে বুঝিয়ে বলুন
:: মোহাম্মদ রাশেদ ::
➡️ শিশু-কিশোরদের মধ্যে বর্তমানে মাদকাসক্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। তথ্য অনুসারে, দেশে ৭০ লাখেরও বেশি মাদকসেবী আছে, যাদের বেশিরভাগ তরুণ। এদের মধ্যে ১০ বছর থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধও আছেন। এমন প্রেক্ষাপটে দেশজুড়ে মাদকবিরোধী বিভিন্ন অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
যেগুলো দেখলে বুঝতে পারবেন আপনার সন্তানের মাদকের প্রতি আসক্তি বাড়ছে। যেসব লক্ষণ দেখলে সতর্ক হওয়া উচিত:
★ যদি দেখেন সন্তানের আচার আচরণে আমূল পরিবর্তন এসেছে; তাহলে সজাগ দৃষ্টি রাখুন তার প্রতি। এক্ষেত্রে দেখা যায়, শান্তশিষ্ট ছেলে হঠাৎ করে অপরিচিতের মতো আচরণ করছে। তার ঘুমের ধরন পাল্টে যাচ্ছে।
★ বিভিন্ন অজুহাতে যদি সন্তান টাকা চায়, তাহলে বিষয়টি স্বাভাবিক নয়। টাকা নেওয়া পরিমাণ বাড়তে থাকলে সতর্ক হতে হবে।
★ এ ছাড়াও মেজাজের হঠাৎ পরিবর্তন বা ঘুম থেকে উঠে মেজাজ খারাপ করা মোটের স্বাভাবিক লক্ষন নয়।
★ পাশাপাশি খাওয়া-দাওয়ার দিকে নজর না থাকা বা অতিরিক্ত ঘুমানো, রাতে জেগে দিনে ঘুমানো, এ ধরণের প্রবণতা দেখা গেলে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
★ মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা প্রচুর মিথ্যা কথা বলে থাকেন। দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া বা অনেক সময় চুরির অভ্যাস তৈরি হওয়ার প্রবণতাও দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞরা এসব লক্ষণ দেখলে অভিভাবকদেরকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন। এসব ক্ষেত্রে সন্তান কোথায় যায়, কাদের সঙ্গে মিশছে, আসলেই স্কুলে বা প্রাইভেটে যাচ্ছে কি-না, এসব অভিভাবকদের নজরদারি করতে হবে।
আরও যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে-
* নতুন কিছু অভ্যাস কিংবা ক্ষুধা বৃদ্ধি
* হঠাৎ ক্ষুধার অভাব
* বন্ধুদের সঙ্গে বেশি সময় কাটানো
* অনিদ্রা বা রাত জেগে থাকা এবং সারাদিন ঘুমের অভ্যাস
* ক্লাসে দুর্ব্যবহার করা
* খারাপ রেজাল্ট বা পড়ালেখায় মনোযোগের অভাব
* শারীরিক ও চেহারায় পরিবর্তন
* চোখে লালচেভাব
* শরীরে কাটাছেঁড়া, আঘাত বা ক্ষতের চিহ্ন
* নিজের প্রতি অযত্ন ও অবহেলা
* পোশাক ও মুখে থেকে কটূ বা অস্বাভাবিক গন্ধ
* প্রায়শই চুইংগাম খেতে দেখা
* ঠান্ডা ছাড়াই সর্দি বা কাশি থাকা
* ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
আপনার সন্তানের মধ্যে এসব লক্ষণ দেখলে দেরি করবেন না। দ্রুত তার সঙ্গে খোলাখুলিভাবে কথা বলুন। কখনো সন্তানের প্রতি চড়াও হবেন না কিংবা তাকে মারধর করবেন না। তাকে বুঝিয়ে বলুন। তারপরও যদি সন্তান মাদক থেকে দূরে না সরে; তাহলে তাকে একজন মানসিক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। মানসিক চিকিৎসকদের মধ্যে অনেকেই আছেন; যাদের মাদকাসক্তি নিরাময়ে বিশেষ দক্ষতা আছে।
গতকাল ছিল মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য- ‘জীবন বাঁচাতে মাদকের তথ্য ভাগ করুন’। মাদক নির্মূলে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এবং বিশ্বকে মাদকের অপব্যবহার থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে এ দিবসটি প্রতি বছরের ২৬ জুন পালিত হয়।
বিশ্বের অনেক দেশই মাদকের গ্রাসে দিশাহীন হয়ে গেছে। যুবসমাজের উল্লেখযোগ্য অংশকে মাদকে আসক্ত রেখে কোনো জাতি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না। এজন্য মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবসের ইতিহাস সবার স্মরণ করা দরকার।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতবর্ষে উৎপাদিত আফিম দিয়ে চীনকে অর্থনৈতিক, শারীরিক ও মানসিকভাবে পর্যুদস্ত করার প্রতিক্রিয়ায় ১৮৩৯ সালের এই দিনে চীনের সম্রাট মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ব্রিটেনের সঙ্গে চীনের এই যুদ্ধই ইতিহাসে প্রথম আফিম-যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। এই যুদ্ধের মধ্য দিয়েই চীন আধুনিক যুগে প্রবেশ করে এবং উন্নতির পথে যাত্রাও সূচিত হয়। সূত্র: বিবিসি