করোনায় বহুমাত্রিক সংকট: বিপাকে মালয়েশিয়া প্রবাসীরা
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জুন ২০২১, ৪:০৯:০৪ অপরাহ্ন
আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া: মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে চরম বিপাকে রয়েছেন মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা। স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমানো এ মানুষগুলো এখন দুঃস্বপ্নের চোরাবালি থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজছেন।
একদিকে কয়েক হাজার কর্মী দেশে ফিরে আটকে আছেন কর্মস্থলে ফিরতে পারছেননা। অন্যদিকে দেশটিতে কঠোর লকডাউনে ঘরে বসে থাকা অনেকে বেকার সময় পার করছেন। চলমান সময়ে বহুমাত্রিক সংকটে তাঁদের সবারই এখন আয়ের পথ বন্ধ।
করোনাভাইরাসের প্রেক্ষিতে অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রবাহ শুরু হয়েছে এতে করে মালয়েশিয়ান কর্মীদের চাকরি সংকুচিত হয়েছে। ফলে সরকার আগে নিজ দেশের নাগরিকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার উপর জোর দিয়েছে।
এদিকে দেশে থাকা অনেক অভিবাসী শ্রমিকের পরিবারেও নেমে এসেছে দুর্দশা। করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় জুনের প্রথম সপ্তাহে কঠোর লকডাউনে চলে যায় দেশটি। বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসা প্রতিষ্টান। চাকরি হারান অনেকে।
কুয়ালালামপুর শহরের জালান ইপুহ এলাকায় থাকেন নরসিংদীর সোহাগ মিয়া। পাচঁ বছর ধরে দেশটিতে থাকলেও পরিস্থিতির কারণে এই মুহূর্তে কোনো বৈধ ভিসা নেই তাঁর। করোনা পরিস্থিতির কারণে কয়েক মাস ধরে কাজও নেই। এ অবস্থায় চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি। সোহাগ বলেন, প্রবাসজীবনে এমন কষ্টের দিন আর কখনো আসেনি। দেশে ফিরে যাব সেই রাস্তাও নেই। আর দেশে ফিরেই বা কী করব। তাই সব কষ্ট সয়ে ঘরে বসে রয়েছি, বাহিরে যাবার কোনো রাস্তা নেই।’
এ দিকে কঠোর লকডাউনেও চলমান রয়েছে ধরপাকড় অভিযান। জানা গেছে, ‘আটক কেন্দ্র’ সংখ্যা বাড়িয়ে অবৈধ প্রবাসীদের ধরপাকড়ে নেমেছে মালয়েশিয়া পুলিশ। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজা জয়নুদিনের বরাত দিয়ে মালয়েশীয় গণমাধ্যম বলছে, চলমান লকডাউনের মধ্যেও অবৈধ বিদেশি অভিবাসীদের ধরপাকড় অব্যাহত থাকবে। জাতীয় নিবন্ধকরণ বিভাগ (এনআরডি) ও পুলিশদের সঙ্গে যৌথভাবে এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে অভিবাসন বিভাগ। গত ৬ জুন ও ২১ জুন অভিবাসন বিভাগের বড় দু,টি অভিযানে ৪৭৪ জন অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। এর মধ্যে ১৬৪ জন বাংলাদেশি রয়েছেন।
একে তো কাজ নেই, তার ওপর ধরপাকড় অব্যাহত থাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে মালয়েশিয়া প্রবাসীদের মধ্যে।
কুমিল্লার নূর উল্লাহ জানান, তাঁরা একসঙ্গে চার জন একটি মেসে থাকেন। কারোরই বৈধ ভিসা নেই। দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে তাঁদের সর্বনাশ হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে এমনিতেই তাঁরা কাজ হারিয়েছেন। ধরপাকড় অব্যাহত থাকলে আরো বেকায়দায় পড়তে হবে।
মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড় অব্যাহত থাকার বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ জরুরি। প্রবাসীরা বলছেন, বাংলাদেশি অভিবাসীরা যেন নিরাপদ থাকেন, সে জন্য সরকার দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসতে পারে।
ধরপাকড় অভিযানের বিষয়ে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন বলছে, এখানে আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ লাখ অবৈধ বিদেশি শ্রমিক রয়েছে, তার মধ্যে বেশির ভাগই ইন্দোনেশিয়ান। অবৈধদের মধ্যে বাংলাদেশিদের অবস্থান ২য়। মাঝে মাঝেই মালয়েশিয়ায় ইমিগ্রেশন অবৈধ বিদেশিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে থাকে। সম্প্রতি ধর-পাকড় তাদের রুটিন কার্যক্রমের অংশ। এটা বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্যে নয় বরং সকল অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের জন্য পরিচালিত।
মিশন বলছে, পৃথিবীর সকল দেশেই অন্য দেশের অবৈধ নাগরিক থাকলে তাদের স্ব স্ব দেশে পাঠিয়ে দেয়। মালয়েশিয়াও এর ব্যতিক্রম নয়। এ ব্যাপারে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাবস্থা করে।
কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রতিনিয়তই যোগাযোগের মাধ্যমে এই ধরনের ব্যাক্তিদের পরিচয় যাচাই পূর্বক তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে আসছে। বিষয়টি একান্তই রুটিন বিষয় সুতরাং এ বিষয়ে অতি মাত্রায় প্রচার-প্রচারণা একদিকে যেমন প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে অযথা ভীতির সঞ্চার করতে পারে এবং অন্যদিকে বিদেশে বৈধভাবে বসবাসরত লাখ লাখ বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তির ক্ষতি সাধন করতে পারে।
জানা গেছে, গত বছরের ১৬ নভেম্বর অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের বৈধতা দিতে রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রাম নামে একটি প্রোগ্রাম চালু করে সরকার। এ প্রোগ্রামে নিয়োগকর্তা কর্তৃক নিবন্ধন ও স্বেচ্ছায় দেশে প্রত্যাবর্তন। রিক্যালিব্রেসি প্রক্রিয়ায় প্রথমে শুধু নির্মাণ, উৎপাদন, চাষ ও কৃষি খাতে সোর্সকান্ট্রি বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশের অবৈধ বিদেশি কর্মীদের বৈধতার জন্য তাদের নিয়োগকর্তারা অনলাইনে আবেদন করার কথা থাকলেও চলতি মাসের প্রথম দিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও প্রাণহাণির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সংক্রমণরোধে লকডাউন কঠোর লকডাউনে চলে যায় সরকার। বন্ধ হয়ে যায় অফিশিয়াল কার্যক্রম। যদিও অনলাইনে কার্যক্রম কিছুটা পরিচালিত হলেও ধীরগতির কারনে অনেকে আবেদন করতে পারেননি বৈধতা নিতে।
এ পর্যন্ত রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামের আওতায় প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার বিদেশি অস্থায়ী জব ভিজিট পাস (পিএলকেএস) এর জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাস্ট্রমন্ত্রী হামজাহ জয়নুদিন।
এ প্রক্রিয়া চলতি মাসে শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবে বৈধতার সময় বাড়ানো হবে কিনা এখনও জানা যায়নি। তবে রিক্যালিব্রেশন কর্মসূচী বাড়ানোর জন্য ১৫ টি দেশের কুটনৈতিকরা মালয়েশিয়া সরকারকে অনুরুধ জানিয়েছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।




