সিলেটে ভূমিকম্প: বেশী ক্ষতির সম্ভাবনা উপশহর, আখালিয়া, বাগবাড়ী, মদিনা মার্কেট এলাকা
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১০ জুন ২০২১, ৩:৫০:৪৫ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: সিলেটে ১০ দিনে ১০ বার ভুমিকম্প হওয়ায় পটভূমিতে আশু করণীয় নির্ধারণে বুধবার বিকেলে সিলেটে সিটি করপোরেশনের (সিসিক) উদ্যোগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও শাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সিসিক ও শাবি যৌথভাবে কাজ করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় সৃষ্ট পরিস্থিতিতে শাবির একাধিক প্রকৌশলী টিম প্রস্তুতি নিয়ে কয়েক দিনের মধ্যেই নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট ও ভবন পরীক্ষা করতে নামবেন। পর্যায়ক্রমে নগরীর ৪২ হাজার ভবন পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসা হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাদের দেয়া নির্দেশনা মোতাকেব সিটি করপোরেশন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বৈঠক শেষে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন- সিলেটে দফায় দফায় ভূমিকম্পের আপদকালীন সময়ে শাবি কর্তৃপক্ষ প্রথম থেকেই সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। খুব দ্রুত শাবির বিশেষজ্ঞরা নগরীর ভবন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নামবেন।
বৈঠক শেষে শাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সিলেটে সম্প্রতি ঘন ঘন ভূমিকম্প হওয়ায় নগরীর সর্বস্তরের মানুষ আতঙ্কের মাঝে আছেন। তবে আমরা আতঙ্কগ্রস্ত নগরবাসীকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই, সিসিক ও শাবিপ্রবির যৌথ উদ্যোগে আমরা দ্রুত কাজে নেমে পড়বো। প্রথম পর্যায়ে সিসিকের তালিকাভুক্ত ভবন, বাসাবাড়ি ও দোকানগুলোকে বিভিন্ন পর্যায়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে এবং যেগুলোকে ভেঙে ফেলা দরকার সেগুলোকে ভেঙে ফেলার ব্যবস্থা করা হবে। আর যেগুলো মেরামত করলে ঠিক হয়ে যাবে সেগুলো মেরামত করার নির্দেশনা দেয়া হবে।
অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, এই কাজটি আমরা দ্রুতই শুরু করবো। আমরা সিসিকের সঙ্গে সহাবস্থানে থেকে সৃষ্ট পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের চেষ্টা করবো এবং সম্ভাব্য সকল বিপদ এড়াতে প্রস্তুতি গ্রহণ করবো।
বৈঠকে সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. নুর আজিজুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং শাবিপ্রবির সিভিল ও পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। ফরাসি ইঞ্জিনিয়ারিং কনসোর্টিয়াম ১৯৯৮-এর জরিপ অনুযায়ী ‘সিলেট অঞ্চল’ সক্রিয় ভূকম্পন এলাকা হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে।
১৮৩৩, ১৮৮৫, ১৮৯৭, ১৯০৫, ১৯৩০, ১৯৩৪, ১৯৪৭ ও ১৯৫০ সালের বড় ভূকম্পনের মধ্যে দুটিরই উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের জৈন্তার ভূগর্ভে। একই উৎপত্তিস্থল থেকে ঘটে যাওয়া ১৮৯৭ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে সিলেট অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেটি ভূকম্পনের ইতিহাসে ‘দ্য গ্রেট আসাম আর্থকোয়েক’ নামে পরিচিত। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৮ মাত্রার বেশি। এই ভূমিকম্পের কারণে ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ পরিবর্তনসহ সিলেট ও অাসাম অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য ভৌগোলিক পরিবর্তন ঘটে।
১৯৫০ সালে অাসামে বড় ধরনের ভূমিকম্পের কারণে সিলেট অঞ্চলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। এই ভূমিকম্পটি ‘আসাম-তিব্বত আর্থকোয়েক’ নামে ইতিহাসে পরিচিত রয়েছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৮.৬।
বছর দশেক আগে বাংলাদেশ, জাপান ও শ্রীলঙ্কার একটি বিশেষজ্ঞ দল সিলেট নগরীর ছয় হাজার ভবনের ওপর জরিপ চালিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করে। এই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, সিলেটের বেশির ভাগ বাণিজ্যিক ভবনই অপরিকল্পিত এবং মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। রিখটার স্কেলে ৭ বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে সেগুলো ধসে পড়বে। পাল্টে যেতে পারে সিলেটের মানচিত্রও। ক্ষতিগ্রস্ত হবে সিলেটের গ্যাস এবং তেলক্ষেত্রগুলো। পরিবেশ বিপর্যয়ও নেমে আসবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপরিকল্পিত বাসাবাড়ি নির্মাণের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে পারে নগরীর শাহজালাল উপশহর, আখালিয়া, বাগবাড়ি, মদিনা মাকের্ট এলাকা।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বহু বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে, যেগুলো ভূমিকম্পের সময় ধসে পড়ার ঝুঁকিতে। তাতে প্রাণহানিও বাড়বে। কারণ, তখন ভূমিকম্পে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যাবে না।