কাতার কুয়েত সৌদি ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক চায় যে শর্তে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জুন ২০২১, ৮:৫১:০৩ অপরাহ্ন
অনুপম প্রতিবেদক: ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায় কি কাতার কুয়েত সৌদি আরব? উত্তর: চায়, তবে কথা আছে। তিন দেশই চায়, ইসরাইল ১৯৬৭ সালের সীমানায় ফিরে যাক এবং ফিলিস্তিনের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করুক। তাহলেই ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে এ আরব দেশগুলো।
কাতার গত শুক্রবার বলেছে অন্যান্য উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর মতো ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে কাতার যোগ দেবে না। এর কয়েক দিন আগে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক না করার ঘোষণা দেয় আরেক পারস্য উপসাগরীয় দেশ কুয়েত।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন চ্যানেল সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে দখলদারিত্বের কারণে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়া হবে না। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলি দখলদারিত্ব অবসান না ঘটানো এবং কয়েক দশকের সংঘাতের নিরসন না হওয়া পর্যন্ত কাতার সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না ইসরাইলের সঙ্গে।
কাতার যেসব কারণে এতদিন ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি সেসব কারণ এখনও রয়েছে জানিয়ে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আব্দুল রহমান বিন আল থানি বলেন, ইসরাইল শান্তি প্রতিষ্ঠায় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করলেই দীর্ঘদিনের এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ নিষিদ্ধ করে কুয়েতের জাতীয় সংসদে একটি বিল পাস হয়েছে। কুয়েতের জাতীয় সংসদ গাজা উপত্যকার ওপর সাম্প্রতিক ইসরায়েলি পাশবিক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিলটি পাস করেছে। ফিলিস্তিন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে কুয়েত জাতীয় সংসদের জরুরি অধিবেশন ডাকা হয়। অধিবেশনে সংসদ সদস্যরা ফিলিস্তিনি জাতির প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ঘোষণা করেন। তারা বলেছে, পূর্ব জেরুজালেম আল-কুদসকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত না হওয়া পর্যন্ত ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি কুয়েতের সংহতি ও সহমর্মিতা অব্যাহত থাকবে।
কুয়েতের পার্লামেন্ট স্পিকার মারজুক আলী আল-ঘানেম বলেছেন, ফিলিস্তিন ইস্যুতে কুয়েতের জনগণ ও সরকারের অবস্থান জানিয়ে দিতে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন বসেছে। ফিলিস্তিন হচ্ছে কুয়েতের প্রধান জাতীয় ইস্যু। তিনি গাজা উপত্যকার বেসামরিক অবস্থানগুলোতে ভয়াবহ আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানান। এছাড়া, কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শায়খ আহমাদ নাসের আল-মোহাম্মাদ আস-সাবাহ বলেছেন, ফিলিস্তিনি জাতির প্রকৃত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের প্রতি কুয়েতের অকুণ্ঠ সমর্থন অব্যাহত থাকবে।
যদিও ইতিপূর্বে সৌদি আরব ইসরাইলকে কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয়া শুরু করেছিল কিন্তু গাজায় এগার দিনের লড়াইয়ের পর ইসরায়েলি বিমানের জন্য সৌদি আকাশপথ নিষিদ্ধ করেছে সৌদি সরকার। গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে ইসরায়েল। পরে ওই বছরের নভেম্বরে আকাশ ব্যবহারে ইসরায়েলকে অনুমতি দিয়েছিল সৌদি আরব।
তুর্কি সংবাদ মাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি জানায়, সৌদি আরবের আকাশপথ ব্যবহার করতে না দেওয়ায় তেল আবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর থেকে আমিরাতের উদ্দেশে উড্ডয়নের জন্য অপেক্ষমান ফ্লাইট বাতিল করা হয়।
সৌদির বাদশা সালমান ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিরতির পর ঘোষণা করেছিলেন ফিলিস্তিনের সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলিদের সকল সুযোগ সুবিধা স্থগিত করা হবে।
গত এপ্রিলে সিএনএন-র সাথে সাক্ষাৎকারে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সল বলেছিলেন, ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে এ অঞ্চলের সকলের ‘বিস্ময়কর উপকার’ হবে। তবে শর্ত হচ্ছে ইসরাইলকে শান্তির পথে আসতে হবে। ফিলিস্তিন থেকে সরে যেতে হবে, জেরুজালেম ফিলিস্তিনের হাতে দিতে হবে। তাহলেই কেবল ইসরাইলে থাকা সব ধর্মের লোকদের সৌদি আরব আসতে দিতে পারি আমরা।