করোনা ডেল্টা ধরন যে কারণে মারাত্মক, ফাইজারের টিকার কার্যকারিতা মাত্র ৫ ভাগের এক ভাগ
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ জুন ২০২১, ৯:২০:৩২ অপরাহ্ন
অনুপম ডেস্ক: যারা করোনার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন তারাও করোনার ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত হতে পারেন। খুব সংক্রামক এটি। করোনাভাইরাসের মূল স্ট্রেনের তুলনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের (ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট) ক্ষেত্রে ফাইজারের তৈরি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কম। এ ভ্যাকসিন মূল স্ট্রেনের তুলনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি পাঁচ ভাগের এক ভাগ উৎপন্ন করে।
সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত এক গবেষণায় এমনটাই দাবি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রথম ভারতে শনাক্ত হয়। এটি ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নামেও পরিচিত।
ওই গবেষণায় দেখানো হয়, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের বয়স যত বেশি, তাদের শরীরে ভ্যাকসিন ততো কম অ্যান্টিবডি উৎপন্ন করে। এছাড়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টিবডির পরিমাণও কমতে থাকে।
দুর্বল বা বয়স্ক রোগীদের শরীরে অতিরিক্ত একটি বুস্টার ডোজ প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরা হয় ল্যানসেটে প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রবন্ধে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে ফাইজার ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ প্রয়োগের মধ্যবর্তী সময় কমানো হয়েছে। কেননা দেখা গেছে, ফাইজারের প্রথম ডোজ গ্রহণের পর আলফা (যুক্তরাজ্য) ভ্যারিয়েন্টসহ অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি কম উৎপন্ন হচ্ছে। গবেষণা প্রবন্ধে যুক্তরাজ্যের নেওয়া এই সিদ্ধান্তটির সমর্থন করা হয়।
যুক্তরাজ্যের ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউট ও ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন হসপিটালের একদল গবেষক এ গবেষণাটি করেন। গবেষণার প্রবন্ধ বৃহস্পতিবার ল্যানসেট সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়।
গবেষণায় ফাইজারের ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন এমন ২৫০ জন স্বাস্থ্যবান লোকের রক্ত সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। প্রথম ডোজ গ্রহণের কমপক্ষে ৩ মাস পর তাদের রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তাদের গড় বয়স ছিল ৪২ বছর।
রক্তে উৎপন্ন অ্যান্টিবডি করোনাভাইরাসের ৫টি ভিন্ন ভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কতটুকু প্রতিরোধ গড়ে তুলছে তা পরীক্ষা করা হয়। পরে তারা ভিন্ন ভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডির কার্যকরিতা তুলনা করেন। এতে দেখা যায় করোনার মূল স্ট্রেনের তুলনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে ফাইজারের ভ্যাকসিন পাঁচ ভাগের এক ভাগ কার্যকর।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের সংক্রামক রোগে চিকিৎসক এমা ওয়েলস বলেন, এই ভাইরাসটি আবার ফিরে আসার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আমাদের তৎপর এবং সতর্ক থাকতে হবে। এ গবেষণাটি করা হয়েছে যাতে আমরা ঝুঁকি ও সুরক্ষা বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করতে পারি।
গবেষণা প্রবন্ধে পরামর্শ দিয়ে বলা হয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো— যত বেশি সম্ভব লোককে ভ্যাকসিনের আওতায় এনে হাসপাতালের বাইরে রাখা। এর সবচেয়ে উত্তম উপায় হলো, দ্রুত ভ্যাকসিনে দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ করা এবং যারা বয়স্ক ও দুর্বল তাদের একটি বুস্টার ডোজ সরবরাহ করা।
উল্লেখ্য, গত এপ্রিলে মার্কিন কোম্পানি ফাইজারের প্রধান নির্বাহী অ্যালবার্ট বোরলা বলেছিলেন, ‘করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন তৃতীয় ডোজ পর্যন্ত প্রয়োজন হতে পারে। এমনকি তৃতীয় বুস্টার ডোজের পর প্রতি বছর একটি করে নতুন ডোজও নিতে হতে পারে। করোনাভাইরাসের নতুন নতুন স্ট্রেইনগুলোর উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে’।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনগুলোর কার্যকারিতা কতদিন থাকবে এ ব্যাপারে গবেষকরা এখনও নিশ্চিত নন। এর আগে ফাইজার জানিয়েছিল তাদের উৎপাদিত ভ্যাকসিন দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর ৯৫ ভাগ পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে সক্ষম। সূত্র: রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান, এনডিটিভি