যে কারণে মারাত্মক ভূমিকম্প ঝুঁকিতে সিলেট, ৯০ শতাংশ মানুষ মরে ভবন ধ্বসে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ মে ২০২১, ১১:৪৫:১২ অপরাহ্ন
অনুপম প্রতিবেদক: ২৯ মে কয়েক দফা (চার বার) ৩০ মে সকালে আবার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় ডেঞ্জার জোন সিলেটের বাসিন্দাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ পর্যবেক্ষণ ও মোকাবেলার কোনো প্রস্ত্ততি না থাকায় আতঙ্ক বেশি মানুষের মনে। বিশেষজ্ঞরা জানান, ৭/৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ৯০ শতাংশ মানুষ মারা যায় ভূমিকম্পে ভবন ধ্বসে পড়ার কারণে।
জানা যায়, সিলেটে ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপিত হলেও পূর্ণতা না পাওয়ায় তা কাজে লাগছে না। স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সেরও ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলার সামর্থ্য নেই। এমতাবস্থায় সিলেট মহানগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ২৪ হাজার ভবন ধ্বসে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে বিশাল জনগোষ্ঠী। রিখটার স্কেলে ৬ থেকে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলেই এসব ভবন ধসে পড়বে। আর ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ। জনমানব শূন্য বিরানভূমিতে পরিণত হতে পারে সিলেট শহর ও আশপাশের এলাকা। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও ভবন কোড না মেনে সুউচ্চ স্থাপনা নির্মাণের ফলে মাঝারি মাত্রার ভূকম্পন হলেই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হতে পারে সিলেট মহানগর।
ইতিহাস দেখায়, ১৫৪৮ সালে প্রচন্ড ভূমিকম্পে সিলেট এলাকায় ব্যাপক ভূ-পরিবর্তন ঘটে। পাহাড়-টিলা জন্মে ভূমিকম্পে। কোথাও বড় জলাশয়। ১৬৪২, ১৬৬৩, ১৮১২ ও ১৮৬৯ সালের ভূমিকম্পে সিলেটের মানচিত্র পাল্টে যায়। সিলেটে এ যাবৎকালের মধ্যে ১৮৯৭ সালের ১২ জুন বিকাল সোয়া ৫টার দিকে সংঘটিত ভূমিকম্প ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থ কোয়াক’ নামে পরিচিত। ৮ দশমিক ৭ মাত্রার সেই ভূমিকম্প ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫০ বর্গ কি.মি. এলাকায় পাকা দালানকোঠার ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। শুধু সিলেট জেলাতেই ভেঙে পড়ে ৫৪৫টি ভবন। বাড়িচাপা পড়ে প্রচুর মানুষ মারা যায়। এ ভূমিকম্পে সৃষ্টি হয় বিশাল আকারের হাওর, বিল ও জলাশয়ের, যা আজো বিদ্যমান। এরপর ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই সিলেটের শ্রীমঙ্গলে ভূমিকম্প ব্যাপক ক্ষতি করে। এর তীব্রতা ছিল ৭.৬।
২০০৯ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (সিডিএমপি) পরিচালিত জরিপে উল্লেখ করা হয়, সিলেট অঞ্চলে ৫২ হাজার ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ২৪ হাজার ভবনই ভূমিকম্পের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ। সেই জরিপ অনুযায়ী দেশে ৩ লাখ ২৬ হাজার ভবন ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। সে সময় ওই জরিপের ফলাফল আশঙ্কাজনক বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা যদিও বলেছেন, বড় ভূমিকম্প হওয়ার আগে ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়ে থাকে, তবে ষোলআনা নিশ্চিত না বড় ভূমিকম্প হওয়ার। কোনো বিশেষ কারণে না-ও হতে পারে।