ফ্যাক্টবক্স: কে ঐ সাংবাদিক যাকে ধরতে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট যুদ্ধবিমান পাঠান রায়ানএয়ার নামাতে?
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ মে ২০২১, ৬:১৫:৫৯ অপরাহ্ন
অনুপম প্রতিবেদক: বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেংকু গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বেশি ক্ষেপে আছেন লিথুয়ানিয়ার সাংবাদিক ও অধিকারকর্মি রোমান প্রোটাসেভিচের উপর। তাই তিনি প্রোটাসেভিচকে বহনকারী রায়ানএয়ার বিমানকে মিনস্ক বিমানবন্দরে নামাতে মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান পাঠান। যুদ্ধবিমান ফ্ল্যাগ দেখায়, মেসেজ পাঠায় বোমা আছে, রায়ানএয়ার বাঁচতে হলে জরুরি অবতরণ করতে।
গত বছরের আগস্ট মাসের বিতর্কিত সাধারণ নির্বাচনে নিজেকে বিপুল ব্যবধানে বিজয়ী বলে দাবি করে আসছিলেন লুকাশেঙ্কো। কিন্তু বিরোধীরা বলছেন, পুকুরচুরি হয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ১৯৯৪ সাল থেকে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে আছেন লুকাশেঙ্কো। গত বছর ষষ্ট বার নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন। বিরোধী পক্ষ লুকাশেঙ্কোর এই শপথ অনুষ্ঠানকে ‘চোরদের বৈঠক’ হিসেবে অভিহিত করেছে। লিথুয়ানিয়ায় নির্বাসিত অবস্থায় থাকা বিরোধী নেতা স্ভেতলানা টিখানোভসকিয়া বলেন, এটি একটি তথাকথিত শপথ অনুষ্ঠান। এটি অবশ্যই প্রহসন।
রায়ানএয়ারের বিমানে গ্রিস থেকে লিথুয়ানিয়ার দিকে যাচ্ছিলেন ইউরোপের পূর্বাঞ্চলীয় দেশ বেলারুশের সাংবাদিক ও অধিকারকর্মী রোমান প্রোটাসেভিচ। তবে বেলারুশের প্রেসিডেন্টের নির্দেশে জোর করে ওই বিমানকে রাজধানী মিনস্কে অবতরণ করানো হয়। ২৩ মে রোববার। বিমানবন্দরেই একপর্যায়ে গ্রেপ্তার করে ২৬ বছর বয়সী প্রোটাসেভিচ। বর্তমানে তিনি পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।
পোল্যান্ডভিত্তিক অনলাইন নিউজ সার্ভিস নেক্সটায় কাজ করতেন ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক প্রোটাসেভিচ। তিনি নেক্সটা চ্যানেলের সহপ্রতিষ্ঠাতাও। গত বছর ম্যাসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামের মাধ্যমে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভের ফুটেজ সম্প্রচার করে নেক্সটা। গত বছরই নেক্সটাকে ‘চরমপন্থি’ ঘোষণা করে বেলারুশ সরকার। বেশ কয়েকটি অভিযোগ থাকায় প্রোটাসেভিচ গত বছর দেশ ছেড়ে পোল্যান্ডে পালিয়ে যান। দোষী সাব্যস্ত হলে ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে তার।
বেলারুশের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, বোমা হুমকির কারণে প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো বিমানটি বেলারুশে অবতরণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। আসলে বিমানটিতে কোনো বোমা পাওয়া যায়নি।
গত বছরের আগস্টে বিতর্কিত নির্বাচনে জয়ী হন ৬৬ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো। ১৯৯৪ সাল থেকে দেশটি শাসন করছেন তিনি।
সব ধরনের বিরোধী মতকে কঠোরভাবে দমন করে আসছেন লুকাশেঙ্কো। বিরোধী অনেক নেতা-কর্মীকে কারাগারে ঢুকিয়েছেন তিনি। অনেক ভিন্ন মতাবলম্বী দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্যও হয়েছেন। বেলারুশের প্রেসিডেন্টের প্রেস সার্ভিস জানায়, সাংবাদিক প্রোটাসেভিচকে বহনকারী রায়ানএয়ার বিমানকে মিনস্ক বিমানবন্দরে নামতে মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান পাঠানোর নির্দেশ দেন লুকাশেঙ্কো।
এদিকে বিমানের গতিপথের জোরপূর্বক পরিবর্তন ও বেলারুশের সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহল। সাংবাদিক প্রোটাসেভিচের মুক্তি ও ঘটনা তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। এ ছাড়া বেলারুশের ওপর নতুন করে অবরোধ আরোপেরও দাবি ওঠে।
বিরোধী মতের ওপর দমনপীড়নের কারণে আগে থেকেই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, সম্পদ বাজেয়াপ্তকরণসহ ইইউর আরও কয়েকটি নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছেন বেলারুশের প্রেসিডেন্টসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘ইইউভুক্ত দুটি সদস্য রাষ্ট্রের একটি জোর করে বিমানের দিক পরিবর্তন করেছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। একই সঙ্গে সাংবাদিক রোমান প্রোটাসেভিচকে গ্রেপ্তারেরও নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা তার দ্রুত মুক্তির দাবি করছি।’ সূত্র: রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান, এবিসিনিউজ, নিউজটক, ওয়াশিংটন পোস্ট