দেশে ১৭ জনের মৃত্যু একদিনে বজ্রপাতে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ মে ২০২১, ১১:২৭:২২ অপরাহ্ন
অনুপম ডেস্ক : দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে বজ্রপাতে নেত্রকোনায় ৮ জন, ফরিদপুরে ৪ জন, মানিকগঞ্জে ২ জন, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে ১ জন মারা যান।
নেত্রকোনার ৪ উপজেলায় মঙ্গলবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে বজ্রপাতে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে খালিয়াজুরীতে ৩, কেন্দুয়ায় ২, মদনে ২ ও পূর্বধলা উপজেলায় ১ শিশু মারা গেছে। এছাড়া ওই সময় খালিয়াজুরীতে ৫ জন ও মদন উপজেলায় ৪ জন আহত হয়েছেন। তারা মাঠে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে হতাহত হয়েছেন।
জানা গেছে, কেন্দুয়া উপজেলার পাইকুড়া ইউনিয়নের বৈরাটী গ্রামের মো. বায়েজিদ মিয়া (৪২) ও কান্দিউড়া ইউনিয়নের কুণ্ডলী গ্রামের মো. ফজলুর রহমান (৫৫) বজ্রপাতে মারা যান। মঙ্গলবার দুপুরে কৃষক বায়েজিদ মিয়া ও ফজলুর রহমান তাদের নিজ নিজ বাড়ির সামনে সবজি ক্ষেত ও ধান ক্ষেতে কাজ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ করে মূষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। একপর্যায়ে বজ্রপাতে তাদের শরীর ঝলসে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পিয়াস পাল তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম আরিফুল ইসলাম জানান, উপজেলার মেন্দিপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের খেলু ফকিরের ছেলে কৃষক অছেক মিয়া (৩২) একই গ্রামের আমির সরকারের ছেলে কৃষক বিপুল মিয়া (২৮) ও বাতুয়াইল গ্রামের মঞ্জুরুল হকের ছেলে মনির হোসেন (২৮) বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। তারা ওই এলাকার বরবরিয়া হাওরে কাজ করছিলেন। এ সময় আহত হয়েছেন অন্তত ৫ জন। আহতদের খালিয়াজুরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে মদন থানার ওসি ফেরদৌস আলম বলেন, উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ফতেপুর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদিরের ছেলে হাফেজ মোহাম্মদ শরীফ (১৮) ও মৃত একই গ্রামের আব্দুল মন্নাফের ছেলে মাওলানা আতাবুর (২১) নামের দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এ সময় বজ্রপাতে পশ্চিম ফতেপুর গ্রামের রবিন (১৫), রুমান (১৮) ও তিয়শ্রী ইউনিয়নের বাস্তা গ্রামের ভিক্ষু মিয়ার স্ত্রী কণা (৪৫) ও চন্দন মিয়ার স্ত্রী সুরমা আক্তার আহত হন। আহতদের মদন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার বিকালে বৃষ্টি শুরু হলে মদন উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ফতেপুর গ্রামের পেছনে পতিত জমিতে কিশোররা ফুটবল খেলতে যায়। এ সময় বজ্রপাত হলে শরীফ ও আতাবুর ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। আহত রুমান ও রবিনকে স্থানীয়রা মদন হাসপাতালে ভর্তি করেন। এদিকে তিয়শ্রী ইউনিয়নের বাস্তা গ্রামের কণা আক্তার ও সুরমা নামের দুই নারী আহত হয়।
এদিকে পূর্বধলা উপজেলার ধলামূলগাঁও ইউনিয়নের পাটলী গ্রামের ইসহাক মিয়ার ছেলে জুনাইদ (৮) নামের এক শিশু বাড়িরপাশে খেলতে গিয়ে বজ্রপাতে নিহত হয়েছে। বিষয়টি পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শিবিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নেত্রকোনা পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সি বজ্রপাতে চার উপজেলার আটজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান বলেন, বজ্রপাতে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে নগদ ১৫ হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া আহতদের পরিবারকে ৩ হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে।
ফরিদপুরে বজ্রপাতে নারীসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকাল ৪টা ও সাড়ে ৪টার দিকে ফরিদপুর পৌরসভার পশ্চিম গঙ্গাবর্দী, পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লাডাঙ্গী মহল্লায়, সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ও মধুখালী উপজেলার চাঁদপুরে এ ঘটনা ঘটে।
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ফরিদপুর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লাডাঙ্গী মহল্লায় বজ্রপাতে নিহত হন আনোয়ারা বেগম (৪৫) নামে এক নারী। ঘটনার সময় ওই নারী স্বামী ও ছেলের সাথে মাঠ থেকে ধান নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন। এ সময় বজ্রপাতের ঘটনায় তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আনোয়ারা বেগম মোল্লাডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা কৃষক কাবুল শেখের স্ত্রী।
এদিকে বিকাল ৪টার দিকে বজ্রপাতে মারা গেছেন কৃষক কবির মোল্লা (৪৮)। তিনি ফরিদপুর পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম গঙ্গাবর্দী মহল্লার গোপাল মোল্লার ছেলে। ধান নিয়ে মাঠ থেকে বাড়ি ফেরার পথে এ বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। অপরদিকে বিকালে বজ্রপাতে সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নে মারা যায় দুলাল খান (৫৮) নামের এক কৃষক। এছাড়া মধুখালী উপজেলার চাঁদপুরে কবির শেখ (৪০) নামের এক কৃষক মারা যায়। সে মাঠে পাটক্ষেত পরিচর্যার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
মানিকগঞ্জে বজ্রপাতে পৃথক দুইজন মারা গেছেন। একজন দিনমুজুর ধানের বোঝা আনার সময় ও অন্যজনের ঘুড়ি উড়াতে গিয়ে মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পৌলি ও গিলন্ড গ্রামে আলাদা বজ্রপাতের ঘটনায় তারা মারা যান। পৌলি এলাকায় নিহত ব্যক্তির নাম আজমত আলী (৫০)। তার বাড়ি জেলার ঘিওর উজেলায় এবং গিলন্ড গ্রামে নিহত ব্যক্তির নাম আসিফ (১৬)। পৌরসভার স্থানীয় ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. কবীর হোসেন বলেন, নিহত আজমত আলী পৌলি এলাকার কৃষক আব্দুল হকের বাড়িতে দিনমজুর হিসেবে কাজ করছিলেন। আজ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ধানক্ষেত থেকে ধানের বোঝা মাথায় নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান দিনমজুর আজমত আলী। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে গিলন্ড গ্রামের আসিফ ঘুড়ি উড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা গেছেন।
কিশোরগঞ্জের নিকলীতে বজ্রপাতে মো. আরিফুল ইসলাম (১৭) নামে এক কিশোর রাখাল নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার গুরুই ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী বিয়াতিরচর হাওরে বজ্রপাতে মৃত্যুর এ ঘটনা ঘটে। নিহত আরিফুল ইসলাম গুরুই ইউনিয়নের বেতি নোওয়াগাঁও এলাকার মিয়া চাঁনের ছেলে।
নিকলী উপজেলার গুরুই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের এবং নিকলী থানার ওসি মো. শামসুল আলম সিদ্দিকী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে বজ্রপাতে তাহের উদ্দিন (৩৫) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে স্থানীয় বন্দেহরি বিলের পাড়ে ঘটনাটি ঘটে। এ সময় মাছ বিক্রির উদ্দেশ্যে স্থানীয় হাটে যাওয়ার পথে আকস্মিক বজ্রাঘাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তিনি দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নের তেগাঙ্গা গ্রামের মৃত তাজু মিয়ার পুত্র।
এ ব্যাপারে দোয়ারাবাজার থানার ওসি মোহাম্মদ নাজির আলম বলেন, লিখিত আবেদনসাপেক্ষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনাক্রমে নিহতের পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
জামালপুরের মাদারগঞ্জে বজ্রপাতে তোজাম্মেল হোসেন (৪৭) নামে এক কৃষিশ্রমিক মারা গেছেন। তিনি মহিষবাথান গ্রামের মৃত শ্যাম প্রামাণিকের ছেলে।
মঙ্গলবার মহিষবাথান পশ্চিমপাড়া আফছার খাঁর কৃষিজমিতে খড়ের পালা তৈরির কাজ করার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তোজাম্মেল মারা যান। এ সময় আফসার খাঁসহ একই গ্রামের জমশের প্রামাণিক ও সিরাজ মিয়া আহত হন।




