খোয়া গেল জেরুজালেম যেভাবে, আরবিদের ইসলামি ভাতৃত্ব কতটুকু?
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:২৯:৩৩ অপরাহ্ন
:: সারওয়ার চৌধুরী ::
আরব জাতীয়তাবাদীরা আরব অঞ্চল থেকে অটোম্যানদের তাড়ানোর জন্যে বৃটিশ রাজশক্তির সহযোগী হয়েছিল। তখন ‘ইসলামি ভাতৃত্ব’ আরবদের বিবেচনায় ছিলই না। তারা চেয়েছে আরব থেকে আজনবি (পরদেশী) খেদাও। বৃটেন তাতে ঐ অঞ্চল ‘সাইজ’ করে দেয়ার সুযোগ পায়।
কীভাবে জেরুজালেম ইসরাইলের দখলে গেল? ছিল অটোম্যান মুসলিম শক্তির হাতে। আরব জাতীয়তাবাদীরা আরব অঞ্চল থেকে অটোম্যানদের তাড়ানোর জন্যে বৃটিশ রাজশক্তির সহযোগী হয়েছিল। তখন ‘ইসলামি ভাতৃত্ব’ আরবদের বিবেচনায় ছিলই না। তারা চেয়েছে আরব থেকে আজনবি (পরদেশী) খেদাও। বৃটেন তাতে ঐ অঞ্চল ‘সাইজ’ করে দেয়ার সুযোগ পায়। ১৯১৭ সালে থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনের ভূমি বৃটেনের দখলে ছিল। ১৯১৭ সালের নভেম্বর মাসে তুরস্কের সেনাদের হাত থেকে জেরুজালেম দখল করেছিল বৃটিশ রাজশক্তি। তখন বৃটিশ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ফিলিস্তিনের মাটিতে ইহুদিদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের জন্য সাহায্য করবে।
বৃটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড আর্থার জেমস বেলফোর বিষয়টি জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন ইহুদি আন্দোলনের নেতা ব্যারন রটসচাইল্ডকে।
তারপরের ইতিহাস কেবল ফিলিস্তিনিরা মার খাওয়ার, ঘর-বাড়িছাড়া হওয়ার।
ওসমানীয় সাম্রাজ্যের পতন হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তি ও ব্রিটিশদের মিত্র আরব জাতীয়তাবাদী বিদ্রোহীদের কাছে পরাজয়ের মাধ্যমে। ১৯২২ সালে তুরস্কের গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলি অটোমান সাম্রাজ্য ও ইসলামী খেলাফত বিলুপ্ত ঘোষণা করে।
Simon Schama-র বই ‘Two Rothschilds and the land of Israel’ (Collins, London, 1978) এর তথ্য অনুযায়ী শতকরা আশি ভাগ ইসরাইলের ভূমি রসচাইল্ড পরিবারের অর্জন। প্রকাশ্যে যায়নিস্ট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা Theodore Herzl মুলত পাপেটের মতো সামনে ছিলেন। তখন তার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছিলেন ধনকুবের এডমন্ড ডি রসচাইল্ড। যায়নিজম শুরুর অন্যতম ফ্রন্টলাইন নেতা Chaim Weizmann এর শক্তির পেছনেও ছিল রসচাইল্ড পরিবার।
একবার একজন রসচাইল্ড বলেছিলেন ওয়েজমানকে, “আমি ছাড়া যায়নিজম সফল হতো না, কিন্তু যায়নিজম ছাড়া আমার ব্যবসার কাজ বর্শাবিদ্ধ হয়ে মারা যেতো।”
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কে? ছিলেন সাবেক ইউএস ভাইস প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে, ইনিও একজন যায়নবাদী। ইসরাইল সফরকালে তখন নিজেই বলেছেন ইসরাইলি টিভিকে, “আমি একজন যায়নবাদী”।
এই হল ভেতরের মিকানিজমের কথা। বাইরের সারফেইসে ধর্মকে ব্যবহার করে বলা হল এভাবে, ‘ইসরাইল প্রতিষ্ঠা হল ডিভাইন প্রমিজ’।
এতেও আসলে অস্বীকার করা হয় বিশ্বব্যাপে ‘হিউম্যান মোবিলিটি’, মানে স্বাভাবিক একটা নিয়মেই এক জায়গার বংশধারা আরেক জায়গায় যায়। মানে ঢাকার ছেলেটির নাতি বৃটিশ হতে পারে, আবার সেই বৃটিশ লোকটির নাতিন অস্ট্রেলিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা হতে পারে। সেই নাতিনের বংশধর চলে যেতে পারে কানাডায় স্থায়ী হতে। সেসব কথা থাক।
তখন ফিলিস্তিন ইংরেজদের হাতে। তখন, আগে ষড়যন্ত্র করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ দখলে-যে রেখেছিল ইংরেজরা, সেইসব দেশ থেকে আত্মরক্ষার জন্যেই তারা সরে যাচ্ছিল। যাওয়ার সময়, হয়তবা যায়নবাদীদের পরামর্শেই বছরের পর বছর ধরে যুদ্ধব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার আশায় লম্বা সময়ের জন্যে বিবাদ লাগিয়ে যায়। তাই তারা প্রায় এক মিলিয়ন মুসলিম ও খৃস্টান লোকদেরে তাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে ধীরে ধীরে ইহুদিদেরকে এনে রাখে।
বিশ শতকের গোড়ার দিকে ফিলিস্তিনে ছিল কয়েক হাজার ইহুদি। বাড়তে বাড়তে পঞ্চাশের দশকে হল ছয় লাখ। আবেগের ঢেউ তোলে বেনিয়ারা এই মর্মে যে, ইহুদীরা তাদের পূর্বপুরুষের মাটিতে ফিরছে। এটাই যদি যুক্তিসংগত হয়, তাইলে রেড ইন্ডিয়ানদের বাপদাদার ভূমি আমেরিকাতে কেন অন্যদেশের মানুষ থাকছে, শাসন করছে? প্রেসিডেন্ট ওবামার অরিজিন তো আমেরিকায় না, আফ্রিকায়। আসলে ওসব আবেগ রাজনীতি ও ব্যবসার মতলবে ব্যবহার। যা দিয়ে দুর্বল অসহায় মানুষদেরকে অন্ধকারে রাখা।
এবার দেখুন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কে? ছিলেন সাবেক ইউএস ভাইস বারাক ওবামার আমলে, ইনিও একজন যায়নবাদী। ইসরাইল সফরকালে তখন নিজেই বলেছেন ইসরাইলি টিভিকে, “আমি একজন যায়নবাদী”।
উল্লেখ্য, গাজা শরনার্থী ক্যাম্পে জন্ম নেয়া হামাস নেতা ইসমাঈল হানিয়ার নেতৃত্বের সামনে ইসরায়েল বেশ বেকায়দায়। গাজায় হত্যাযজ্ঞ বেশি হলে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে হতে পারে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে। পুরো ইসরায়েলে-যে আরব-ইসরাইলি মারামারি হচ্ছে, এটাও ইসমাঈল হানিয়ার কূট কৌশল।
সারওয়ার চৌধুরী: কবি, কলামিস্ট, অনুবাদক, নির্বাহী সম্পাদক-অনুপম নিউজটোয়েন্টিফোর




