বিশ্বব্যাপী করোনার বিস্তার ও প্রতিরোধ: একটি সমীক্ষা
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ মে ২০২১, ১০:০৪:২৯ অপরাহ্ন
বিশ্বব্যাপী করোনার বিস্তার ও প্রতিরোধ: একটি সমীক্ষা
এস এম আজাদ হোসেন
▶️ এপ্রিল মাসে বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্ত মার্চ মাস থেকে ৮৪ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯১ জন বেশী হয়েছে। মৃত্যু বেড়েছে ৯৩ হাজার ১০০ জন এবং সুস্থতা বেড়েছে ১ কোটি ১১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৯১ জন। যুক্তরাজ্য এবং সাউথ আফ্রিকায় করোনা সংক্রমণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
মার্চ মাস থেকে মহামারী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবলীলা বিশ্বব্যাপী বাড়তে শুরু করেছে এবং এপ্রিল মাসে আক্রান্ত,মৃত্যু ও সুস্থতার সংখ্যা বেড়েছে।কোন কোন দেশে আশংকাজনকভাবেই বেড়েছে আক্রান্ত এবং মৃত্যু।
আমরা যদি শুধু মার্চ এবং এপ্রিল মাসের তুলনা করি অর্থাৎ ১ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে ১ মে সকাল ১০টা পর্যন্ত ৩০ দিনে বিশ্বখ্যাত জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী বিশ্বে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২ কোটি ২৫ লাখ ৫৪ হাজার ২৩ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৭ লাখ ৫১ হাজার ৮০১ জন করে।যেখানে মার্চ মাসে মোট আক্রান্ত হয়েছিল ১ কোটি ৪১ লাখ ১৫ হাজার ৩৩২ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৪ লাখ ৭০ হাজার ৫১১ জন করে। অর্থাৎ মার্চ থেকে এপ্রিলে ৮৪ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯১ মানুষ বেশী আক্রান্ত হয়েছে।
এপ্রিলের ৩০ দিনে মোট মৃত্যু ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৩ জনের বা প্রতিদিন গড়ে ১২ হাজার ১৯৩ জন করে। যেখানে মার্চে মোট মৃত্যু ছিল ২ লাখ ৭২ হাজার ৬৮৩ জনের বা গড়ে প্রতিদিন মৃত্যু ছিল ৯ হাজার ৮৯ জন করে।মার্চ মাস থেকে এপ্রিল মাসে মৃত্যু বেড়েছে ৯৩ হাজার ১০০ জন।
আমরা যদি গত ৩০ দিনে করোনা থেকে সুস্থতার সংখ্যাটা দেখি তাহলে দেখা যায় মোট সুস্থ হয়েছেন ২ কোটি ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ১৯৫ জন বা দিনে গড়ে ৮ লাখ ২৮ হাজার ৯৭৩ জন করে। মার্চে সুস্থ হয়েছিলেন প্রতিদিন গড়ে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৬৫০ জন করে।অর্থাৎ সুস্থতা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
এপ্রিলে প্রতিবেশী দেশ ভারতে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ঘটেছে। এছাড়া ব্রাজিল,যুক্তরাষ্ট্র,তুরস্ক,ফ্রান্স,জার্মানী, আর্জেন্টিনা, ইরান,ইতালী,মেক্সিকো,পোলান্ড,ইউক্রেন,,স্পেন, প্রভৃতি দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু যা সত্যি সত্যি বিশ্বে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এবার যদি এক নজরে এপ্রিল মাসে শীর্ষ ২০টি দেশের করোনা আক্রান্তের পরিসংখ্যানটা দেখি-
যুক্তরাষ্ট্রে এপ্রিল মাসে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ লাখ ৩৭ হাজার ৬৩০ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৬৪ হাজার ৫৮৮ জন করে।মার্চ মাস থেকে এপ্রিলে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ৯৫ হাজার ৭২০ জন।
ভারতে এপ্রিল মাসে ৬৯ লাখ ৩৬ হাজার ৪২৫ জন বা গড়ে প্রতিদিন ২ লাখ ৩১ হাজার ২১৪ জন করে আক্রান্ত হয়েছে।মার্চ মাসে আক্রান্ত হয়েছিল ১০ লাখ ৩৬ হাজার ৪৩১ জন বা প্রতিদিন গড়ে ৩৪ হাজার ৫৪৮ জন করে। মার্চ মাস থেকে এপ্রিল মাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ৫৮ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৪ জন।
ব্রাজিলে এপ্রিল মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ লাখ ১২ হাজার ৭০৪ জন বা প্রতিদিন গড়ে ৬৩ হাজার ৭৫৭ জন করে। মার্চ মাস থেকে এপ্রিলে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে ২ লাখ ৯১ জন।
ফ্রান্সে এপ্রিল মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৯ লাখ ৭২ হাজার ২৬৬ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৩২ হাজার ৪০৯ জন করে।গত এক মাসে ফ্রান্সে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ৮৪৯ জন।
তুরস্কে এপ্রিল মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ লাখ ৩ হাজার ৪০৯ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৫০ হাজার ১১৪ জন করে। মার্চ মাসে আক্রান্ত হয়েছিল ৫ লাখ ৭৬ হাজার ২৯২ জন বা প্রতিদিন গড়ে ১৯ হাজার ২১০ জন করে। মার্চ মাস থেকে এপ্রিল মাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ৯ লাখ ২৭ হাজার ১১৭ জন।
রাশিয়ায় এপ্রিল মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৬০ হাজার ১৯৩ জন। যা প্রতিদিন গড়ে ৮ হাজার ৬৭৩ জন করে। মার্চ মাস থেকে এপ্রিলে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে ৩০ হাজার ৫৪৮ জন।
যুক্তরাজ্যে এপ্রিল মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৭০ হাজার ৮৩৫ জন বা গড়ে প্রতিদিন ২ হাজার ৩৬১ জন করে।মার্চ মাস থেকে এপ্রিলে যুক্তরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৪ হাজার ৩৪৭ জন কম হয়েছে।
ইতালীতে এপ্রিল মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৩৭ হাজার ৭৫৪ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১৪ হাজার ৫৯২ জন করে। মার্চ মাস থেকে এপ্রিলে ইতালীতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৯৭ হাজার ৯৯৩ জন কম হয়েছে।
স্পেনে এপ্রিল মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৩৯ হাজার ৭২৪ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৭ হাজার ৯৯১ জন করে।গত এক মাসে স্পেনে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫২ হাজার ৪৬৮ জন বেশী হয়েছে।
জার্মানিতে এপ্রিল মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৬১ হাজার ৮৯৭ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১৮ হাজার ৭৩০ জন করে।গত একমাসে জার্মানিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ২ হাজার ৬৮১ জন বেড়েছে।
আর্জেন্টিনায় এপ্রিল মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ লাখ ২৮ হাজার ৫৪২ জন বা গড়ে প্রতিদিন ২০ হাজার ৯৫১ জন করে।গত একমাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখ ৩ হাজার ১৪২ জন বেশী হয়েছে।
কলম্বিয়ায় এপ্রিল মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৩৪৭ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১৫ হাজার ১১২ জন করে।গত একমাসে কলোম্বিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ৩০৬ জন বেড়েছে।
পোলান্ডে এপ্রিল মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৭০ হাজার ৪২৫ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১৫ হাজার ৬৮১ জন করে।মার্চ মাস থেকে এপ্রিলে পোলান্ডে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ১১ হাজার ৪১৫ জন কমেছে।
ইরানে এপ্রিল মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ লাখ ১৩ হাজার ৫১৩ জন বা গড়ে প্রতিদিন ২০ হাজার ৪৫০ জন করে।গত একমাসে ইরানে সংক্রমণ ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৮ জন বেড়েছে।
মেক্সিকোতে এপেইল মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮ হাজার ২৪ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৩ হাজার ৬০১ জন করে।গত একমাসে মেক্সিকোতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ হাজার ৬৯০ জন কম হয়েছে।
ইউক্রেনে এপ্রিল মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৩৬৯ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১৩ হাজার ১৭৯ জন করে। মার্চ মাস থেকে এপ্রিলে ইউক্রেনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ২৭৬ জন বেশী হয়েছে।
পেরুতে এপ্রিল মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৫০ হাজার ৬৩৮ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৮ হাজার ৩৫৫ জন করে।মার্চ মাস থেকে এপ্রিলে পেরুতে আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ হাজার ৩৬৬ জন বেড়েছে।
ইন্দোনেশিয়ায় এপ্রিল মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৫৬ হাজার ৬৫৬ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৫ হাজার ২২২ জন করে।ইন্দোনেশিয়ায় এক মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ হাজার ৪৮৫ জন কম হয়েছে।
চেসনিয়ায় এপ্রিল মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৮ হাজার ৪২৬ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৩ হাজার ২৮১ জন করে। মার্চ মাস থেকে এপ্রিলে চেসনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫৮ জন কমেছে।
সাউথ আফ্রিকায় এপ্রিলে মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩ হাজার ৫৩ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ১০১ জন করে।মার্চ মাস থেকে এপ্রিলে সাউথ আফ্রিকায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে।
এদিকে কমপক্ষে ১৭টি দেশে করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার ঘটেছে, তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। তারা আরো বলেছে, ভারতে প্রথম পাওয়া যায় করোনা ভাইরাসের বি.১.৬১৭ ভ্যারিয়েন্ট। জিআইএসএইড-এর মুক্ত ডাটাবেজে কমপক্ষে ১২০০ সিকুয়েন্স আপলোড করা হয়েছে। এগুলো শনাক্ত করা হয়েছে কমপক্ষে ১৭টি দেশ থেকে। বেশির ভাগ সিকুয়েন্স আপলোড করা হয়েছে ভারত, বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুর থেকে। করোনা ভাইরাস মহামারির সাপ্তাহিক আপডেটে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক টেডরোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেছেন, কোভিড-১৯ টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে দরিদ্র দেশগুলো বঞ্চিত হচ্ছে।
দরিদ্র দেশের জন্য টিকা নিশ্চিতে ডব্লিউএইচওর উদ্যোগে শুরু হওয়া কোভ্যাক্স সুবিধার প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এ কথা বলেন তিনি।
বিশ্ব সংস্থাটির প্রধান গেব্রিয়েসুস বলেন, ‘বিশ্বে এখন পর্যন্ত টিকার ৯০ কোটি ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে এর ৮১ শতাংশ ডোজ দেয়া হয়েছে ধনী ও উন্নত দেশগুলোকে। দরিদ্র দেশগুলো পেয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ ডোজ।’
বিশ্বব্যাপী টিকা বণ্টনে এমন বৈষম্যের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। ধনী দেশে জমা পড়ে থাকা টিকার অতিরিক্ত ডোজ নিম্ন আয়ের দেশের স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিতদের শরীরে প্রয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে, ২৫ গুণ গতিতে ধনী দেশে টিকাদান বিশ্বের মোট জনসংখ্যার পাঁচ শতাংশকে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা দেয়া হয়েছে। তবে টিকার বিতরণ ব্যবস্থাপনায় দেখা গেছে বড় ধরনের বৈষম্য। বেশির ভাগ টিকাই বাগিয়ে নিয়েছে ধনী দেশগুলো।
গত ৮ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১১ শতাংশ হয়েও বৈশ্বিকভাবে দেয়া করোনা টিকার ৪০ শতাংশ নিয়েছে ২৭টি ধনী দেশের নাগরিকরা।
লেখকঃ এস এম আজাদ হোসেন
সাংবাদিক,সমাজকর্মী।