স্বমহিমায় ভাস্বর সামাদ আজাদ
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ এপ্রিল ২০২১, ৩:০৮:৩২ অপরাহ্ন
:: তাজউদ্দিন আহমদ ::
গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষকে নেতা কর্মীর চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে মুল্যায়ন করতেন। অভিভাবকের চোখে সবাইকে দলমতের ঊর্ধ্বে দেখতেন।
জাতীয় পর্যায়ে যারা বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের প্রতিভাবান, বহু গুণে গুণান্বিত রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব, যারা গণবান্ধব, সকলের মধ্যমণি, তারা আজ না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তাদের মধ্যে রাজনীতিবিদ আবদুস সামাদ আজাদ একজন অতুলনীয় নেতা। তিনি এ পৃথিবী থেকে চলে গেলেও গণমানুষের নেতা হিসাবে যুগের পর যুগ মানুষ মনে রাখবে। মানুষ তাঁকে স্মরণ করে চলেছে। নিজ নির্বাচনি অঞ্চলসহ দেশজুড়ে তাঁর রাজনৈতিক সুখ্যাতি যেমন ছিল জীবদ্দশায়, তেমনিভাবে আজও মানুষের মধ্যে বিরাজমান রয়েছে।
আমাদের (জগন্নাথপুর উপজেলা) প্রত্যন্ত হাওর পাড়ের গ্রামটির সূর্য সন্তান সামাদ আজাদ যে একজন কিংবদন্তি রাজনৈতিক বটবৃক্ষ তা অস্বীকার করা যাবে না। জাতশত্রু কিংবা বিদঘুটে অন্ধকারে থাকা হিংসুকও স্বীকার করে তিনি অবিসংবাদিত নেতা। এ গুণীজনের কথা বাড়িয়ে বলার কিছু নাই। বাস্তবতার নিরিখে সত্য বলার প্রয়োজনে বলা প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি।
খেটে খাওয়া মানুষের সামাদ আজাদ, কৃষকের সামাদ আজাদ গ্রাম বাংলার মেহনতি মানুষের সামাদ আজাদ। সর্বোপরি সামাদ আজাদ অনন্য সামাদ আজাদ। যিনি স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছিলেন রাজনৈতিক অঙ্গনে তাঁর নাম সামাদ আজাদ। রাজনৈতিক বিচক্ষণতার জন্য যেসব গুণাবলীর প্রয়োজন ছিল তার সবটুকুই যেন মহান রাব্বুল আলামিন তাঁকে দিয়েছিলেন। ভাটি অঞ্চলে তার আগমন, বলা যায় দূর্গম গাঁ থেকে ভোরের সূর্য হয়ে এসেছিলেন কল্যাণকর কাজে ব্রত হওয়ার জন্যে সামাদ আজাদ।
যে সময়ে সামাদ আজাদ বিদ্যাপীঠে যেতেন তখনকার দিনে এই দূর্গম হাওর পাড়ের ছোট্ট গ্রামের বাসিন্দারা হেমন্তে পায়ে আর বর্ষায় একমাত্র নৌকা ছিল চলাচলের বাহন।
হেমন্তকালে বাঘ ভাল্লুক জঙ্গল নলে ঘেরা রাস্তা পাড়ি দিয়ে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে এসে থানা সদর জগন্নাথপুর উপজেলায় লেখাপড়া করতেন। বাবা মা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য স্বপ্ন নিয়ে তাদের আদরের দুলালকে এই দূর্গম পথ বেয়ে বিদ্যাপীটে পাঠানোর কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে একটুও দ্বিধা করেননি। প্রাইমারি শিক্ষা গ্রামে শেষ করার পর মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জনে জীবন বাজী রেখে স্কুলে আসতেন। বাবা মায়ের অদ্যম স্পৃহা দেখে স্বপ্ন পুরণের জন্যে অক্লান্ত পরিশ্রম শুরু করলেন। মেধাবী সামাদ স্বপ্ন পুরণ করতে যেয়ে অনেক কাঠখড় পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত ঠিকই সফল হতে সক্ষম হন। সকলের চেনামুখ হয়ে বেড়ে ওঠার আগেই বাবা-মা পরপারে চলে যান। কিন্তু থেমে থাকেন নি এই নেতা। সেই বাল্যকাল থেকেই তিনি জীবন যুদ্ধে লড়াকু সৈনিক। উপরের দিকে সিঁড়ি বেয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেন তিনি সামাদ আজাদ প্রতিভাবান একজন। এবার উচ্চশিক্ষায় দীক্ষিত হওয়ার জন্য ছুটে যান ঢাকা শহর। সেখানে গিয়ে স্বপ্ন ছিল উচ্চতর সনদ গ্রহণ করে দেশের নামকরা হয়তো বা সরকারের বড় কর্তা হবেন। কিন্তু বাধ সাজে রাজনীতি। ক্রমান্বয়ে রাজার নীতি রাজনীতি তাকে ঘিরে ধরে। ছাত্র অবস্থায় রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন। ফলে রাজনীতির নেশা ঝেঁকে বসে। কাউকে দেখা মাত্র এক ঝলক হাসি দিয়ে সবাইকে কাছে টেনে নিতেন। গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষকে নেতা কর্মীর চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে মুল্যায়ন করতেন। অভিভাবকের চোখে সবাইকে দলমতের ঊর্ধ্বে দেখতেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্ত হওয়ার সময় আসাম প্রদেশ সিলেটের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত থাকার জন্য বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। ৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে অগ্রভাগে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মোশতাকের কুটনৈতিক আত্মঘাতী ষড়যন্ত্র থেকে বের করার জন্য ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯১ সালে বিরোধী দলের উপনেতা থাকা কালে সংসদীয় গনতন্ত্রের জন্য ভূমিকা পালনে ছিলেন অগ্রদূত। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসলে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবারও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন।
সামাদ আজাদ ছিলেন দলকানা, বঙ্গবন্ধুর সহচর, আওয়ামী রাজনীতির চেতনার আদর্শে অনুপ্রাণিত। দল বিরোধী কর্মকান্ডে কিংবা আপোষকামী রাজনীতির তাকে স্পর্শ করতে পারেনি বলেই রাজনৈতিক উচ্চ মাকামে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিলেন। তিনি মনে করতেন জনগণের জন্য রাজনীতি করলে জনগণ সর্বক্ষণ পাশে থাকবে। সে জন্য সম্পৃক্ততার রাজনীতি করার সংগ্রাম আমরণ করে গেছেন আবদুস সামাদ আজাদ ।