আমলকির অনেক গুণ: রোগ প্রতিরোধ, ফুসফুস ও ব্রেইন শক্তিশালী করে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ এপ্রিল ২০২১, ১২:৫৭:৪০ অপরাহ্ন
পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, আমলকিতে পেয়ারার চেয়ে ১০ গুণ ও কাগজি লেবুর চেয়ে ৩ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। এছাড়া আমলকিতে কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে
অনুপম প্রতিবেদক: ইফতারের আগে পালবাড়ি বাজারে গেলাম জিলাপি কিনতে। ওমা! জিলাপির দোকানের পাশেই দেখি সবজিবিক্রেতার সামনে তাজা আমলকি কিছু। সাধারণ আমলকি না, তারা আকৃতির আমলকি। ইংরেজিতে বলে star gooseberry ওটা। নিলাম সামান্য ইফতারে যোগ করতে।
আমলকির অনেক গুণ জানি। আমাদের উপমহাদেশের আমলকি, ভারতে যেটিকে বলে ‘আমলা’, ঐ যে প্রসিদ্ধ আমলা তেল চুলের জন্য, ওটা আমলকির তেল। এই আমলকিকে ইংরেজরা বলেন ইন্ডিয়ান গুজবেরি। অঞ্চলভেদে নানা রূপের হয় আমলকি।
পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, আমলকিতে পেয়ারার চেয়ে ১০ গুণ ও কাগজি লেবুর চেয়ে ৩ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। এছাড়া আমলকিতে কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। একজন বয়স্ক লোকের প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ দরকার। এই পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ দিনে দুটো আমলকি খেলেই এসে যায়।
আমলকি, হরিতকি ও বিভিতকি (বহেড়া), এই তিন ফলের নির্যাসকে একত্রে ত্রিফলা বলা হয়।
এবার জানা যাক আমলকির উপকার সম্পর্কে:
আমলকি চুলের টনিক হিসেবে কাজ করে এবং চুলের পরিচর্যার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি কেবল চুলের গোড়া মজবুত করে তা নয়, এটি চুল বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
এটি চুলের খুসকির সমস্যা দূর করে ও পাকা চুল প্রতিরোধ করে।
আমলকির রস কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যা দূর করতে পারে। এ ছাড়াও এটি পেটের গোলযোগ ও বদহজম রুখতে সাহায্য করে।
এক গ্লাস দুধ বা পানির সঙ্গে আমলকি গুঁড়া ও সামান্য চিনি মিশিয়ে দিনে দু’বার খেতে পারলে অ্যাসিডিটির সমস্যা কমবে।
আধাচূর্ণ শুষ্ক আমলকি এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে খেলে হজম সমস্যা কেটে যাবে। খাবারের সঙ্গে আমলকির আচার হজমে সাহায্য করে।
প্রতিদিন সকালে আমলকির রসের সঙ্গে মধু মিশে খাওয়া যেতে পারে। এতে ত্বকের কালো দাগ দূর হবে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
আমলকির রস দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও চোখের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চোখের প্রদাহ, চোখ চুলকানি বা পানি পড়ার সমস্যা থেকে রেহাই দেয়।
আমলকি চোখ ভাল রাখার জন্য উপকারী। এতে রয়েছে ফাইটো-কেমিক্যাল যা চোখের সঙ্গে জড়িত ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
এ ছাড়াও প্রতিদিন আমলকির রস খেলে নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর হয় এবং দাঁত শক্ত থাকে।
আমলকির টক ও তেঁতো মুখে রুচি ও স্বাদ বাড়ায়। রুচি বৃদ্ধি ও খিদে বাড়ানোর জন্য আমলকির গুঁড়ার সঙ্গে সামান্য মধু ও মাখন মিশিয়ে খাওয়ার আগে খেতে পারেন।
আমলকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমায়। কফ, বমি, অনিদ্রা, ব্যথা-বেদনায় আমলকি অনেক উপকারী।
ব্রঙ্কাইটিস ও অ্যাজমার জন্য আমলকি খুব উপকারী। তাছাড়া এ ফল শরীর ঠাণ্ডা রাখে, শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে, পেশি মজবুত করে।
আমলকি হৃদযন্ত্র, ফুসফুস শক্তিশালী করে ও মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ায়।
শরীরের অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট ঝরাতে সাহায্য করে আমলকি।
লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে তুলে দাঁত ও নখ ভাল রাখে।
এ ফলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান বুড়িয়ে যাওয়া ও সেল ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
সর্দি-কাশি, পেটের পীড়া ও রক্তশূন্যতা দূরীকরণে বেশ ভাল কাজ করে।
ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কোলেস্টেরল লেভেলেও কম রাখতে যথেষ্ট সাহায্য করে আমলকি।
★ তবে কিডনি রোগীরা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আমলকি খাওয়া ভাল।
তথ্যসূত্র: হেলথলাইনডটকম