দেশে করোনার কারণে ১ কোটি ৬৮ লাখ নতুন গরিব, ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ৬৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান : সিপিডি
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ এপ্রিল ২০২১, ৩:২২:২৪ অপরাহ্ন
অনুপম ডেস্ক: করোনা মহামারির প্রভাবে দেশের ১ কোটি ৬৮ লাখ মানুষ নতুন গরিব হয়েছে বলে দাবি করেছে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ, সিপিডি।
তারা বলছে, এই সময়ে কাজ হারিয়েছেন মোট শ্রমশক্তির কমপক্ষে তিন শতাংশ মানুষ। আর চলতি বছরে শেষ নাগাদ এসএমই ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে সর্বোচ্চ সংখ্যক শ্রমিক কর্মহীন হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে বলেও পূর্বানুমান করছে তারা।
শনিবার ‘করোনাকালে শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারে ট্রেড ইউনয়িনের ভূমিকা: কতিপয় প্রস্তাবনা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে এ তথ্য জানানো হয়। সিপিডি ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিআইএলএস এর যৌথ উদ্যোগে এ ভার্চুয়াল সংলাপ হয়।
সিপিডির বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের কোষাধ্যক্ষ ও এপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর সভাপতিত্বে সংলাপে সিপিডির ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, বিলসের মহাসচিব ও নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম খান ও ভাইস চেয়ারপারসন সংসদ সদস্য শিরীন আখতার বক্তব্য রাখেন।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সংলাপের মূল প্রতিবেদন উপস্থাপনায় বলেন, করোনাকালে কাজ হারিয়ে গরিব মানুষের সংখ্যা ২০ থেকে বেড়ে ৩৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। করোনাকালে দরিদ্র হয়েছে ১ কোটি ৬৮ লাখ মানুষ। দেশের ২০ শতাংশ পরিবারের আয় কমে গছে। এ অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ার পথে থাকলেও নতুন সংক্রমণ তা বিলম্বিত করছে। নতুন করে আরও দরিদ্র হওয়া ও কর্মহীন হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
করোনায় প্রচুর মানুষ কাজ হারিয়েছে। বিভিন্ন স্তরের হিসাব করলে এ সংখ্যা ১ কোটি ১১ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ২ কোটি ৫ লাখ হতে পারে। কর্মহীন হওয়াদের মধ্যে প্রচুর অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক রয়েছে।
করোনা সংক্রমণের প্রথম ধাপে সারা দেশে শ্রমজীবী মানুষের বেতন কমেছে ৩৭ শতাংশ, ঢাকায় ৪২ ও চট্টগ্রামে ৩৩ শতাংশ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ৬৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। শহর এলাকায় অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে এমন ১০০ জনের মধ্যে ৬৯ জন এখনো চাকরি হারানোর ঝুঁকির মধ্যে আছে।
কর্মসংস্থানের দিক থেকে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাত হচ্ছে, উৎপাদন, নির্মাণ, ট্রান্সপোর্ট, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা, খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। মাঝামাঝি ঝুঁকির খাত হচ্ছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, আভ্যন্তরীণ সেবা ও শিক্ষা প্রদানকারী সংস্থাগুলো। তবে কৃষি ও তথ্য যোগাযোগ খাতে কম ঝুঁকিতে রয়েছে।
সংকটকালীন সময়ে শ্রমিক এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঝুঁকি মোকাবিলা এবং সংকট থেকে পুনরুদ্ধারের বিষয়ে সীমিত সাফল্য এসেছে।
২০২০ সালের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে চার লাখ অভিবাসী শ্রমিক তাদের চাকরি হারিয়েছেন। কর্মক্ষেত্রে কোভিড-১৯ প্রভাব ২০২০ সালের প্রথমার্ধে বেশি লক্ষ্য করা গেছে। তবে অধিকাংশ শ্রমিক তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এজন্য দেশের ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে সংগঠিত এবং অসংগঠিত উভয় ধরনের শ্রমিকদের ক্ষেত্রে শ্রমবাজারের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
মোয়াজ্জেম আরও বলেন, অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। সরকার, নিয়োগকারী এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক শ্রম ও মানবাধিকার সম্পর্কিত চুক্তি স্বাক্ষর করতে একত্রে কাজ করা উচিত।
সংলাপে বলা হয়, করোনায় সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে দিনমজুর, পরিবহণ শ্রমিক, রাস্তার পাশের দোকানদার, হকার, চা বিক্রেতা ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের মানুষজন। তাদের ৬৩ শতাংশ ঘর ভাড়া দিতে পারেনি, ৩৯ শতাংশ পানি-বিদ্যুৎ বিল, ৩৬ শতাংশ স্কুল ফি দিতে পারেনি।
৫৭ শতাংশ গরিব মানুষ গ্রামে টাকা পাঠাতে পারেনি। বিলসের মহাসচিব ও নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম খান বলেন, সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে শ্রমবাজার পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা চলছে। এই সব কর্মকাণ্ডে ট্রেড ইউনিয়নের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশের ট্রেড ইউনিয়নগুলো করোনাকালের সংকটের মাঝে মানবিক ও শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করে গেছে। তাদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপ্তির পর্যালোচনার মাধ্যমে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক নীতিগুলো এবং নিয়োগকারীদের কর্মকাণ্ডগুলোকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে তাদের ক্ষমতা এবং ভবিষ্যতে আরও সম্পৃক্ততা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়তা করবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিলসের ভাইস চেয়ারম্যান শিরীণ আখতার বলেন, করোনার শিক্ষা নিয়ে প্রতিটি দুর্যোগ কীভাবে মোকাবিলা করা যায় তার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। দুর্যোগ মোকাবিলায় সংলাপ জরুরি। শুধু একতরফা নয় সক্রিয় সামাজিক সংলাপে মালিক পক্ষ, সরকার, ও ট্রেড ইউনিয়ন সবার অংশগ্রহণ সব পক্ষকে থাকতে হবে।
তার মতে, ট্রেড ইউনিয়নের সক্ষমতা যতক্ষণ না বাড়বে ততক্ষণ শ্রম উন্নয়ন ঘটবে না। শ্রমিকের উন্নয়ন বলতে শুধু গার্মেন্টস খাতকে বুঝলেই হবে না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানিক খাতের বাইরে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতেও অনেক শ্রমিক রয়েছে। একটা রিকসাচালক, একজন দিনমজুর- এরা দিন আনে দিন খায়। এদের দায়িত্বও কাউকে তো নিতে হবে।
আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুওমো পটিয়াইনন বলেন, সংগঠিত এবং অসংগঠিত উভয় ক্ষেত্রে শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা সরবরাহের আওতায় আনার দিকে সরকারের মনোনিবেশ করা উচিত।
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বলেন, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় অংশগ্রহণমূলক সামাজিক সংলাপের বিকল্প নেই। তবে সব পক্ষকে নিয়ে সংলাপের উদ্যোগ নেয়ার দায়িত্ব সরকারের।