প্রকৃতিতে পক্ষপাত নেই, চাঁদ সূর্য সকলের, শুভ নববর্ষ
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২০ এপ্রিল ২০২১, ৭:৩৪:৩০ অপরাহ্ন
:: সারওয়ার চৌধুরী ::
পৃথিবী সব ধর্ম বর্ণ গোত্রের মানুষকে নিয়ে নিজ কক্ষপথে ঘুরছে। ঘুরছে চন্দ্র সূর্য যার যার পথে। ঘুরছে নিজ নিজ পথে যদিও, তারা সকলেই সকলের সাথে সম্পর্কসূত্রে বাঁধা। এ ভব-সংসারের সকল কিছু সকলের। ‘সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’। প্রকৃতিতে পক্ষপাত নেই। পয়লা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ সকলের। বছরের হিসাব সকলের। প্রকৃতির রুপের পরিবর্তন সকলের জন্যে আসে।
ক.
বাংলা সন উদ্ভাবন করেছিলেন পন্ডিত জ্যোতির্বিজ্ঞানী আমীর ফতেহ উল্লাহ সিরাজী। মুঘল সম্রাট আকবর তাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ১৫৮৪ খৃষ্টাব্দে। আমীর ফতেহ উল্লাহ সেকালে প্রচলিত ও অপ্রচলিত বিভিন্ন পঞ্জিকা তুলনামূলক পর্যালোচনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, হিজরী চন্দ্র সনকেই সৌর গণনায় আনেন। হিজরী সনের বছর ৩৫৪ দিনের স্থলে ৩৬৫ দিনে এনে যে নতুন সন উদ্বাবন করেছিলেন, সেটিই বাংলা সন। ১৫৮৫ খৃষ্টাব্দে বাদশাহ আকবর এটি চালু করেছিলেন।
খ.
আরবি ভাষার দেশশুলোতে হিজরি সনকে ‘ইসলামি সন’ ও ‘আরবি সন’ দুইই বলে। মহররমের পয়লা তারিখকে আরবরা বলে ‘রাস আল সানা’ আক্ষরিক অর্থ ‘বছরের মাথা’। মানে যেখান থেকে বছর শুরু।
তবে যখন ইংরেজি নববর্ষ আসে, বেশির ভাগ মুসলিম অমুসলিম পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। উপহার দেয়া নেয়া করেন। কিছু সংখ্যক মুসলিম কট্টর অবস্থানে থাকেন, ইংরেজি ‘হেপি নিউ ইয়ার’ তারা গ্রহণ করেন না। ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা আদান প্রদানে নীরব থাকেন।
এ ব্যাপারে আরব আমিরাতে পাবলিক স্পিকার (মানে যিনি ওয়াজ করেন) ও সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা আলি আল সালুম ইংরেজি ‘দ্য ন্যাশনাল’ পত্রিকায় ২০১৫ সালে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন:
‘আরবি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর কথা—কুল্লা আম ওয়া আনতুম বিখায়র অর্থ প্রতিবছর এ দিনে তোমার মঙ্গল কামনা করি। মানে ঐ কথাটাই—হেপি নিউ ইয়ার—শুভ নববর্ষ। আমি এটা বলি, এটা সুন্দর; শুভেচ্ছা দেয়া নেয়া সুন্দর আচরণ। আমি এমন করি, আমি মুসলিম।’
তিনি আরো বলেন:
‘কাউকে শুভেচ্ছা জানানো, কারো কাছ থেকে শুভেচ্ছা নেয়াতে ভুল কিছু নাই।’
কট্টর অবস্থানে যারা, মানে, অমুসলিমকে শুভেচ্ছা জানানো ও তাদেন শুভেচ্ছা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে যারা, তাদের ব্যাপারে আলি আল সালুম বলেন:
‘এই মুসলিমরা তাদের মনগড়া ব্যাখ্যা দেন ইসলামের। সাধারণ মুসলিমদেরকে অন্য ধর্মের লোকেরা শুভ নববর্ষ জানালে তারা খুশি হন। কারণ এতে তো হারাম কিছু নেই। শুভ কামনা জানাচ্ছে।
একজন অমুসলিমের প্রশ্নের উত্তরে আলি জানিয়েছিলেন:
অনেকেই আপনার ‘কুল্লা আম ওয়া আনতুম বিখায়র’ বলার উত্তরে বলবেন, ‘ওয়া আনতা বিখায়র’ মানে ‘তোমার জন্যেও শুভ কামনা। সুতরাং বন্ধু আল্লাহ সহায় এবং শুভ নববর্ষ’।
গ.
বাংলা ভাষায় কথা বলেন নানা ধর্মের মানুষ। এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সুবিধা অসুবিধা সবাই অভিন্নভাবে পান। মৌসুমের আশির্বাদও সকলে পান। এ ভূখণ্ডের ভূপ্রকৃতির সুন্দর অসুন্দর মঙ্গল অমঙ্গল সকলকে স্পর্শ করে।
‘মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা’। ১৪২৮ বাংলা নববর্ষ সকলের জন্যে কল্যাণ নিয়ে আসুক।
সারওয়ার চৌধুরী: কবি, কলামিস্ট, অনুবাদক