বিশ্বে করোনায় মৃত ৩০ লাখের বেশি, আগের ২০ লাখ এক বছরে, পরের ১০ লাখ তিন মাসে

অনুপম প্রতিবেদন: বিশ্ব জুড়ে  করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল পর্যন্ত। রয়টার্সের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে পুনরায় ভাইরাসটির আক্রান্তের ধরন টিকাদান কর্মসূচিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।

সমগ্র বিশ্বে কোভিড—১৯ আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আবার বেড়ে চলেছে। কিছু দেশে কমতে থাকলেও ভারত ও ব্রাজিলের পরিস্থিতি খারাপের দিকে। ভারতে সোমবার প্রথমবারের মতো দৈনিক আক্রান্ত লক্ষাধিক। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এর জন্য যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া অতিসংক্রামক নতুন ধরনকে দায়ী করছেন। এছাড়া লকডাউন ও অন্যান্য বিধিনিষেধ মানতে মানুষের অনীহাকেও এর জন্য দায়ী করছেন অনেকে। 

রয়টার্সের ট্যালি অনুযায়ী করোনা শুরুর পর এর সংক্রমণে প্রাণহানি বিশ লাখে পৌঁছাতে সময় লেগেছিল এক বছরের বেশি। কিন্তু পরের দশ লাখ মারা গেছেন মাত্র তিন মাসে। ফলে দেখা যাচ্ছে, এ বছরের শুরু থেকে ভাইরাসটি আরও প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে।

বর্তমানে দৈনিক করোনায় প্রাণহানির দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। এখন প্রতিদিন বিশ্বজুড়ে যত কোভিড রোগী প্রাণ হারাচ্ছেন তার চারজনের একজন হলেন ব্রাজিলের বাসিন্দা। দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এখন ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে।

সোমবার ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা রেকর্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় কোনো দেশ হিসেবে গতদিন ভারতে এক লাখের বেশে মানুষের দেহে শনাক্ত হয়েছে ভাইরাসটির সংক্রমণ। দেশটিতে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও গড়ে এখন ৫ শতাধিক।

ভারতের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য মহারাষ্ট্র সোমবার থেকে শপিং মল, সিনেমা হল, পানশালা, রেস্তোরাঁ ও ধর্মীয় প্রার্থনালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে জারি হয়েছে রাত্রিকালীন কারফিউ এবং সপ্তাহান্তে লকডাউন। রাজধানী নয়াদিল্লিতে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

ইউরোপে করোনায় মোট প্রাণহানির মধ্যে যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ফ্রান্স, ইতালি ও জার্মানি— এই পাঁচ দেশে মারা গেছে ৬০ শতাংশ। চীন থেকে ২০১৯ সালে ডিসেম্বরে ছড়ানো এই ভাইরাসে অঞ্চল হিসেবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইউরোপ। 

করোনায় প্রাণহানিতে বরাবরের মতো শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মহামারি করোনা এ পর্যন্ত দেশটির ৫ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে; যা বিশ্বে করোনায় মোট মৃত্যুর ১৯ শতাংশ।

রোববার পর্যন্ত ৩৭ কোটির বেশি মানুষ করোনা টিকা কমপক্ষে একটি ডোজ নিয়েছেন, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গবেষণার তথ্য সরবরাহকারী সংস্থা ‌‘আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা’র বরাতে এ হিসাব দিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

তবে, টিকা পাচ্ছে না অনেক গরীব দেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের জন্য টিকা লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করার জন্য অনুমোদিত কোভিড-১৯ টিকা আরও বেশি পরিমাণে দান করার জন্য উন্নত দেশগুলোকে অনুরোধ করছে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর গত বছরের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করে। এর আগে একই বছরের ২০ জানুয়ারি জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।