একজন দক্ষ সংগঠক হয়ে ওঠার গল্প: সালেহ আহমদ খান এমবিই
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ মার্চ ২০২১, ৮:২৩:৪৬ অপরাহ্ন
একজন দক্ষ সংগঠক হয়ে ওঠার গল্প:
সালেহ আহমদ খান, এমবিই
– সামাজিক সংগঠন হচ্ছে মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বাড়ানোর এক মিলনস্থল; যেখানে সামাজিক সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে তৈরি হয় একটি পরিবার। একটি অঞ্চল হয়ে যায় একটি ঘরের ছাদ। একই ছাদের নিচে থেকে একে অপরের ভাব আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে কিছু সামাজিক দায়িত্ব পালনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া। একই এলাকার মানুষের মধ্যে একে অপরের সুখে-দুঃখে, প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে পাশে থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া।
আনোয়ার শাহজাহানের পরিচয় ও কার্যক্রম জানা থাকলেও কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে এমনই একটি সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে। অর্থাৎ ২০১২ সালের ১৬ এপ্রিল গোলাপগঞ্জ হেল্পিং হ্যান্ডস, ইউকের প্রতিষ্ঠালগ্নে তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখেছি, জেনেছি। আনোয়ার শাহজাহানসহ আরও ১৭-১৮ জন গোলাপগঞ্জের যুক্তরাজ্যপ্রবাসী সম্মিলিতভাবেই প্রতিষ্ঠা করেন সংগঠনটি। এর প্রতিষ্ঠালগ্নে সময়োপযোগী একটি সংবিধান তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয় আমাদের।
গোলাপগঞ্জ হেল্পিং হ্যান্ডস (ইউকে)’র প্রতিষ্ঠাকালীন ইসি কমিটির কমিটির আমি ছিলাম প্রধান উপদেষ্টা এবং আনোয়ার শাহজাহান ছিলেন প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন সেক্রেটারি। সেই থেকে তাঁর সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করার সুযোগ হয়। ফলে কাছ থেকেই দেখেছি তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা এবং টিমওয়ার্কের অভিজ্ঞতা।
২০১২ সাল থেকে আমি নিজেও হেল্পিং হ্যান্ডসের প্রধান উপদেষ্টা এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করি। একইভাবে আনোয়ার শাহজাহান প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন সেক্রেটারি, ভাইস চেয়ারম্যানসহ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দীর্ঘ ৯ বছরে সংগঠনের উত্থান-পতনে আমি শাহজাহানের সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা দেখেছি। দেখেছি, কীভাবে একটি সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সদস্যদের সাথে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হয়। আমি তাঁর এসব গুণের জন্যই আবির্ভূত।
২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাস। আনোয়ার শাহজাহান ব্রিটেনে গোলাপগঞ্জ কমিউনিটির কল্যাণে কাজ করার জন্য সম্পূর্ণ নতুন চিন্তাধারা নিয়ে আরেকটি সংগঠন করার পরিকল্পনার কথা বলেন। আমাকে প্রথম সভায় উপস্থিত থাকার অনুরোধ করেন। তিনি আমাকে নতুন সংগঠনটির আহবায়কের দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্যও অনুরোধ করেন। আমি সেদিন বিনয়ের সাথে দায়িত্ব গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করি। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। নতুন একটি সংগঠনের আহ্বায়ক হলে প্রচুর সময় দিতে হবে। শারীরিক বিভিন্ন অসুস্থতার জন্য আমার পক্ষে সব সময় ঘরের বাইরে যাওয়াও সম্ভবপর নয়। তবে আনোয়ার শাহজাহানের নতুন ভাবনার কথা শুনে এবং তাঁকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে প্রথম সভায় উপস্থিত থাকার ইচ্ছার কথা জানাই।
২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রথম সভার আয়োজন করেছিলেন আনোয়ার শাহজাহান। শারীরিক অসুস্থতার জন্য ওই দিন উপস্থিত থাকতে পারিনি। টেলিফোনে দুঃখ প্রকাশ করি। সভা শেষে খবর নিয়ে জানলাম, সভায় নতুন সংগঠন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সবাই সমর্থন জানিয়েছেন। একটি আহ্বায়ক কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ড. রেনু লুৎফাকে আহবায়ক এবং আনোয়ার শাহজাহানকে সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেদিন আনোয়ার শাহজাহান অনেক আনন্দিত ডক্টর রেণু লুৎফাকে আহবায়কের দায়িত্বে গ্রহণে রাজি করাতে পেরেছেন বলে। আনোয়ার শাহজাহান বলেন, আমরা নতুনত্ব কিছু করতে চাই। ব্রিটেনের বাংলাদেশি সাংগঠনিক ইতিহাসের প্রথম বারের মত নতুন একটি সংগঠনে মহিলাকে সর্বোচ্চ দায়িত্ব দেয়া হল। আনোয়ার শাহজাহানের সাথে কথা বলে আমি নিজেও সংগঠনের সদস্য পদ গ্রহণ করে সাথে থাকার আশ্বাস দিলাম। সংগঠনটির নাম রাখা হয়েছে গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্ট, ইউকে। ২০১৮ সালের শেষের দিকে নির্বাচনের মাধ্যমে ইসি কমিটি গঠন করা হলে মোহাম্মদ আব্দুল বাছিতকে চেয়ারম্যান এবং আনোয়ার শাহজাহানকে জেনারেল সেক্রেটারির দায়িত্ব দেয়া হয়। শুরু হয় ইসি কমিটির পথচলা।
অতি অল্প দিনের মধ্যে গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্টের কার্যক্রম প্রবাসীদের নজড় কেড়ে নেয়। ফলে সবাই সদস্য পদ গ্রহণ করতে শুরু করলেন। ট্রাস্টের পক্ষ থেকে সমুদ্রসৈকত ভ্রমণ, ফুটবল টুর্নামেন্ট, প্যারেন্টস কনফারেন্স, প্রথম গোলাপগঞ্জ উৎসব, সবজি মেলা, গোলাপগঞ্জের নাগরিকদের ফ্রি লিগ্যাল ও একাউন্টসি সুবাধা, পিঠা মেলাসহ অসংখ্য কার্যক্রমে সবার কাছে একটি প্রিয় সংগঠন হিসেবেও সুনাম অর্জন করল। এমনিভাবে মাত্র দুই বছরের মধ্যে সরকারের চ্যারিটি কমিশন থেকে রেজিস্ট্রেশন পেয়ে যায় সংগঠনটি। সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য পেয়ে যায় সরকারি অনুদান। আর এসব কাজ সম্ভব হয়েছে আনোয়ার শাহজাহানের সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে।
সমাজের অবহেলিত মানুষগুলোকে সঠিক রাস্তা দেখানোই সামাজিক সংগঠনের অন্যতম কাজ। আর এ কাজে আনোয়ার শাহজাহান নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ব্রিটেনে সামাজিক সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে প্রয়োজন দক্ষ সংগঠকের। প্রয়োজন একতা ও জনসংযোগ; প্রয়োজন ভালো মানসিকতার। এখানে যত বেশি সংগঠন হবে, তত বেশি জনসংযোগ বাড়বে। এলাকার উন্নয়নও হবে অধিক হারে; এটি একান্তই ব্যক্তিগত মত।
আনোয়ার শাহজাহান শুধু একজন সমাজচিন্তক কিংবা সংগঠক নন, তিনি একাধারে লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক। সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটের যে কজন গুণী ব্যক্তি একক প্রচেষ্টায় গবেষণার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকে মূর্ত করার নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের একজন হলেন লেখক ও গবেষক আনোয়ার শাহজাহান। নিভৃতচারী এই লেখক নিরলস প্রচেষ্টায় মুক্তিযুদ্ধের অনালোচিত মানুষের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তুলে ধরছেন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান ও সৌধের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। আঞ্চলিক ইতিহাস রচনায়ও তিনি কাজ করে যাচ্ছেন নীরবে। মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি সিলেটের ইতিহাস ও ঐতিহ্যই হচ্ছে তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র। নিজের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সবার সামনে উপস্থাপন করতে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
সিলেটের গোলাপগঞ্জের প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে ১৯৯৬ সালে আনোয়ার শাহজাহান রচনা করেন ‘গোলাপগঞ্জের ইতিহাস ও ঐতিহ্য’। এটি ছিল গোলাপগঞ্জের প্রথম লিখিত ইতিহাস গ্রন্থ। প্রায় আড়াই দশক আগে সারা বাংলাদেশে বেশির ভাগ জেলারই ইতিহাস রচিত হয়নি। সেখানে উপজেলার ইতিহাস লেখার দুঃসাহস সবার ছিল না। বিশিষ্ট ইতিহাস গবেষক মুহাম্মদ আসদ্দর আলীর মতে, “আনোয়ার শাহজাহান বয়সের দিক থেকে শুধু তরুণই নন, তিনি একজন প্রবাসীও বটে। তা সত্ত্বেও তিনি গোলাপগঞ্জের ইতিহাস রচনায় যে মননশীলতা ও দুঃসাহস দেখিয়েছেন, তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।”
আনোয়ার শাহজাহান পরবর্তীকালে ওই গ্রন্থের ভুলত্রুটি সংশোধন করে ৩১৮ পৃষ্ঠার প্রথম সংস্করণ প্রকাশ করেন। আসলেই গ্রন্থটি হাতে নিলে বোঝা যায় এর পেছনে তিনি কতটুকু সময় ব্যয় করেছেন। তাঁর পরিশ্রমের ফসল এ গ্রন্থ তিনি নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অমূল্য কীর্তি হিসেবেই তৈরি করেছেন। প্রথম সংস্করণের ভূমিকায় বাংলা পিডিয়ার প্রধান সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক প্রধান প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম বলেন, “গোলাপগঞ্জের ইতিহাস ও ঐতিহ্য গ্রন্থটি পড়লে বোঝা যায়, তিনি এটির পেছনে কতটা শ্রম ও মেধা প্রয়োগ করেছেন। দীর্ঘ সময় ব্যয় করে তিনি গ্রন্থটিকে তথ্যসমৃদ্ধ করে তুলেছেন।” আসলেই গোলাপগঞ্জের ইতিহাস ও ঐতিহ্য হাতে নিলেই বোঝা যায় একটি অসাধ্য কাজ করেছেন আনোয়ার শাহজাহান। গোলাপগঞ্জের প্রথম ইতিহাস লিখে তিনি শুধু প্রসংশিত হয়েছেন তাই নয়, বিশ্ব দরবারে গোলাপগঞ্জ কে তুলে ধরতে পেরে গোলাপগঞ্জকে করেছেন সম্মানিত।
বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা। দীর্ঘ নয় মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতার সূর্য উঠেছিল এ দেশে। দীর্ঘ এই সময়ে ত্রিশ লাখ নিরীহ মানুষ হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।
মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দেয়া সেই সব শহিদের স্মৃতি চিরজাগরূক রাখতে দেশের বিভিন্ন স্থানে তৈরি করা হয়েছে স্মৃতিসৌধ ও ভাস্কর্য। আনোয়ার শাহজাহান ২০১৮ সালে সিলেট বিভাগের ৭৬টি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান, সৌধ নির্মাণ এবং স্থাপত্যকর্মের বর্ণনাসহ একাত্তরে সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবহুল ইতিহাস নিয়ে প্রকাশ করেন ‘সিলেটে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান ও সৌধ’। বইটি মহান মুক্তিযুদ্ধের এক অনন্য দলিল।
সিলেটের খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে প্রথম গ্রন্থ ‘সিলেটের খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা’। সিলেটে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে আনোয়ার শাহজাহানের আরেকটি গ্রন্থ ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ২০১৭ সালে সিলেটের ৪৮ জন খেতাবপ্রাপ্ত বীরযোদ্ধার পরিচিতি এবং মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের অবদানের কথা তুলে ধরেছেন এতে। এর আগে কোনো লেখকের পক্ষে সম্ভব হয়নি এই অসাধারণ কর্ম সম্পাদন করার।
আনোয়ার শাহজাহান স্বাধীনতাযুদ্ধে রাষ্ট্রীয় খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনবৃত্তান্ত এবং মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের বীরত্বগাথা নিয়ে ৭৫৬ পৃষ্ঠায় দুই খণ্ডে প্রকাশ করেন ‘স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা’। গ্রন্থ দুটি ২০১৬ ও ২০১৭ সালে প্রকাশের পর ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বইটির প্রথম খন্ডে রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ, বীর-উত্তম ও বীরবিক্রম এবং দ্বিতীয় খণ্ডে বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা। ভবিষ্যতে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যাঁরা গবেষণা করবেন, তাঁদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের এই মূল্যবান গ্রন্থটি রেফারেন্স হিসেবে বিবেচিত হবে।
‘স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা’ বইটির প্রথম খন্ডের ভূমিকা লিখে বইটির গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি করেছেন সেক্টর কমান্ডার এবং সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অব.) কে এম শফিউল্লাহ (বীর-উত্তম)। তাঁর মতে, “‘স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা’ বইটিতে তথ্যের ঘটনাবহুল উপস্থাপন সাহিত্যমানেও উত্তীর্ণ। এতে করে যাঁরা সাধারণ পাঠক, তাঁরা তো বটেই, যাঁরা ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেন, তাঁরাও বিশেষ উপকৃত হবেন।”
স্বাধীনতাযুদ্ধের একজন বীরযোদ্ধা, ৩ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আজিজুর রহমানের (বীর-উত্তম) মতে, “ মুক্তিযুদ্ধের রোমাঞ্চকর অসংখ্য কাহিনি উঠে এসেছে ‘স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা’ গ্রন্থে। এগুলো অনেক কল্পকাহিনিকেও হার মানায়, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে; মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে এবং এ নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে আরও গ্রহণযোগ্য ইতিহাস লিখতে অনুপ্রাণিত করবে।”
মুক্তিযুদ্ধের সময় ৪ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মেজর জেনারেল (অব.) চিত্তরঞ্জন দত্ত, বীর-উত্তম। বইটির দ্বিতীয় খণ্ডের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন, “‘স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা’ বইয়ে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি, যা পড়ে ভাবীকালের প্রজন্ম উৎসাহিত হবে, মুক্তিযুদ্ধের গৌরব ও সংগ্রামের ইতিহাসের সাথে তারা পরিচিত হবে। অন্যায় ও অসত্যের কাছে, ভীরুতা ও কাপুরুষতার কাছে বাঙালি যে কখনো কোনো দিন মাথা নত করেনি, বর্তমান ও অতীতের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তারই জ¦লন্ত সাক্ষী।”
বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক প্রফেসর ড. মাহমুদ শাহ কোরেশী বলেন, “‘স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা’ বইটি ইতিহাসের এক অনন্য দলিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সন্তানদের সাহসিকতার ইতিহাস জানতে হলে বইটি অধ্যয়ন করা প্রয়োজন। এটি আমাদের উত্তরসূরিদের জন্য এক অনবদ্য নথি হয়ে থাকবে।”
আনোয়ার শাহজাহান মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংরক্ষণ করতে গিয়ে যে শ্রম দিয়েছেন, প্রজন্মান্তরের জন্য যে দলিল তৈরি করেছেন, তা তুলনাহীন। তিনি তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন ও জীবনবৃত্তান্ত, পারিবারিক পরিচয়সহ যে তথ্য সংযোজন করেছেন, সংগ্রহ করেছেন, তা বিস্ময়কর। ‘স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে বইপত্র প্রকাশন থেকে।
আনোয়ার শাহজাহানের কাজের পরিধি ব্যাপক। সমাজের প্রতিটি ভালো কাছে আছে তাঁর সম্পৃক্ততা। সমাজসেবা, সাংবাদিকতা, সাংগঠনিক কার্যক্রম, শিক্ষাসেবাসহ সবকিছুতেই তিনি ভূমিকা পালন করে চলেছেন। গোলাপগঞ্জের ধারাবহরে তিনি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। গোলাপগঞ্জের সাংবাদিকদের কল্যাণে একখণ্ড জমিসহ একটি ভবন তৈরি করে দিয়েছেন। লক্ষিপাশা মুরাদিয়া ছবুরিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে দান করেছেন ১২ শতক জমি। ধারাবাহরে এলাকাবাসীর জন্য ১৪ শতক জমি দান করে নির্মাণ করে দিয়েছেন একটি কবরস্থান। আমনিয়া পূর্ব পাড়া মসজিদের জন্য ১২ ডেসিমেল জমি কিনে সেখানে নির্মাণ একটি মসজিদসহ অসংখ্য সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান।
সিলেট অঞ্চলের সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার শতাধিক বছরের স্বর্ণময় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মারক প্রতিষ্ঠান সিলেট প্রেসক্লাব ২০১৯ সাল থেকে প্রতিবছর ‘সিলেট প্রেসক্লাব-আনোয়ার শাহজাহান সম্মাননা’ অ্যাওয়ার্ড চালু করেছে। প্রতিবছর সিলেটের একজন লেখককে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়। লেখক সম্মাননা প্রদান নিঃসন্দেহে সিলেটের লেখকদের যথাযথ মূল্যায়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ মহতি উদ্যোগে আনোয়ার শাহজাহানও হয়েছেন সম্মানিত।
আনোয়ার শাহজাহানের মতো লেখক ও গবেষকেরা মানুষের অন্তরে পৌঁছানোর জন্য লেখেন অত্যন্ত সরল ও সাবলীল ভাষায়। গবেষণাকর্মের সব রীতি ঠিক রেখে ইতিহাস রচনা করে তিনি হয়ে উঠেছেন সবার কাছে প্রিয়জন। তিনি যখন যাঁর সহযোগিতা নিয়েছেন, তাঁর গ্রন্থে সেসব ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছেন। এতে করে তিনি খাটো হননি মোটেই, বরং হয়েছেন অনন্য ও অসাধারণ।
সালেহ আহমদ খান, এমবিই : জন্ম সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানার লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নের ফুলসাইন্দ গ্রামে। ব্রিটেনে তিনি অনেক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাসহ সমাজসেবামূলক কাজে সম্পৃক্ত। তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটেনের রানি কর্তৃক এমবিই পদক পেয়েছেন। ফুলসাইন্দ গ্রামে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে এলাকাবাসীর কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।