সকল ভাষা সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২:৫৫:৩৬ অপরাহ্ন
অনুপম অনলাইন ডেস্ক : শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনষ্টিটিউট আয়োজিত চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বের সকল ভাষা সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পৃথিবীর হারিয়ে যাওয়া ভাষাগুলো সংরক্ষণের জন্যই তাঁর সরকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনষ্টিটিউট গড়ে তুলেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভাষার অধিকার রক্ষা করা, ভাষাকে সম্মান দেয়া এবং পৃথিবীর হারিয়ে যাওয়া ভাষাগুলো সংরক্ষণের জন্যই আমি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনষ্টিটিউট গড়ে তুলেছি।’
তিনি আজ রবিবার ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনষ্টিটিউটে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন।
শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনষ্টিটিউট সম্পর্কে বলেন, ভাষা নিয়ে পড়াশোনা, ভাষার ইতিহাস সংগ্রহ করা এবং এ ব্যাপারে যারা শিক্ষা ও গবেষণা করবেন তাঁরা যেন সুযোগ পান সে ব্যবস্থা এখানে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের, আমরা রক্ত দিয়ে ভাষার কথা লিখে গিয়েছি। কাজেই অন্য ভাষাগুলো যাতে হারিয়ে না যায়, এর অস্তিত্ব যে আছে সেটা যেন প্রকাশ পায়, সেজন্য আমরা এই ব্যবস্থা নিয়েছি। কাজেই এটা আমি মনে করি বাংলাদেশের জন্য একটা সম্মানজনক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানকে দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে উন্নীত করায় তিনি ইউনেস্কোকে ধন্যবাদও জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষা করে, আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমাদের অন্যভাষা যেমন শিখতে হবে তেমনি মাতৃভাষাও শিখতে হবে। সেই সাথে আমাদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষাটাও সংরক্ষণ করতে হবে।
তিনি বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা সংরক্ষণ করা গেলে তারা সেই ভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। সেজন্য আমরা যখন বিনামূল্যে বই দিচ্ছি তখন তাদের বইগুলো ছাপিয়ে বিনামূল্যে দিয়ে দিচ্ছি, যাতে তারাও নিজের ভাষা শিখতে এবং কথা বলতে পারে, সেদিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছি।
ভাষা নিয়ে গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় এবং আন্তর্জাাতিক পর্যায়ে সরকার এ বছর থেকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা জাতীয় পদক-২০২১’ ও ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা আন্তর্জাতিক পদক-২০২১’ প্রবর্তন করেছে। প্রতি দুই বছর অন্তর এই সম্মাননা প্রদান করা হবে।
জাতীয় অধ্যাপক বিশিষ্ট গবেষক ও লেখক রফিকুল ইসলাম এবং খাগড়াছড়ি জাবরং ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বাংলাদেশে বিদ্যমান বিভিন্ন মাতৃভাষার কার্যক্রম ও বিকাশ প্রশস্ত করার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রথমবারের মত ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা জাতীয় পদক-২০২১’ এ ভূষিত হন।
উজবেকিস্তানের ইসমাইলভ গুলম মির জায়ালিজ এবং বলিভিয়ার অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এ্যাক্টিভিজমো লিংগুয়ান বা ল্যাংগুয়েজ এ্যাকটিভিজম ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা আন্তর্জাতিক পদক-২০২১’ এ ভূষিত হন।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম এবং মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা’র হাতে পদক তুলে দেন। উজবেক ইসমাইলভ গুলম মির জায়ালিজ-এর পক্ষে ঢাকায় উজবেকিস্তানের অনারারি কনস্যাল তাহের শাহ এবং বলিভিয়ার সংস্থার পক্ষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন পুরস্কার গ্রহণ করেন।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। ইউনেস্কোর হেড অব অফিস এবং বাংলাদেশ প্রতিনিধি বিটট্রেস কালডুন বক্তৃতা করেন। বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধ’ু শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহব্বু হোসেন স্বাগত ভাষণ দেন।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী এবং মাতৃভাষা ইনষ্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. জীনাত ইমতিয়াজ আলী মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মিশন প্রধান এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ভাষা শহীদদের স্মরণে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন। এরপরই একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ সমবেত কন্ঠে পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, একটা ভাষা মানুষের পরিচয়। এই পরিচয় আমাদের সম্মান এনে দেয়। এজন্য আমাদের রক্ত দিতে হয়েছে। রক্ত দিয়ে লিখেছি ভাষার অক্ষর। এটা আমাদের গৌরবময় অর্জন। এ প্রসঙ্গে জাতির পিতার ভাষণের উদ্ধৃতি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতি পিতা বলেন, ‘মাতৃভাষা আন্দোলনে বাঙালিরাই প্রথম রক্ত দিল। দুনিয়ার কোথাও ভাষা আন্দোলনে গুলি করে মানুষ হত্যার নজির নেই।’
তিনি বলেন, সত্যিকারার্থেই ভাষার অধিকারের জন্য কেউ এত রক্ত দেয়নি। এই ভাষার জন্য আমাদের সংগ্রাম করতে হয়েছে। সেই সংগ্রামের হাত ধরেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।
ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি রোমন্থন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানীরা আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ওপর কেবল একটি বিজাতীয় ভাষাই চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টাই করে নাই, তাদের দাবি না টিকলে তারা আরবি এবং ল্যাটিন হরফে বাংলা লেখার প্রচলনের উদ্যোগও গ্রহণ করে। সেটা ঠেকানোর জন্যও বাঙালিকে সংগ্রাম করতে হয়েছে এবং একের পর এক এই সংগ্রামের পথ বেয়েই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি।
তিনি ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস জানার জন্য সবাইকে পাকিস্তানের ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের জাতির পিতাকে নিয়ে করা রিপোর্ট যেটি তিনি ১৩ থেকে ১৪ খন্ডে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন সেই সিরিজটি পড়ে দেখার আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সিক্রেট ডকুমেন্ট অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অদ দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ সিরিজের বইগুলো জাতির পিতার বিরুদ্ধে করা রিপোর্ট নিয়ে প্রকাশিত হলেও এর মাধ্যমে সত্য উপস্থাপিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি পদক্ষেপ মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের বীজ বপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
তিনি বলেন, ভাষার সংরক্ষণ, বিকাশ ও গবেষণায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবদানের জন্য পদক দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। আজ থেকে এ পদক চালু হয়েছে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং ভাষার মাসে গুণীজন ও ভাষার প্রতি সম্মান জানাতে পারলাম, এটা আমাদের সৌভাগ্য।
করোনার কারণে নিজের শিক্ষক রফিকুল ইসলামের হাতে সরাসরি পদক তুলে দিতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী এবং একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারাতেও দুঃখ প্রকাশ করেন। (বাসস)